কৃষকের বন্ধু সাপ কেন সংরক্ষণ করতে হবে

কৃষকের বন্ধু সাপ কেন সংরক্ষণ করতে হবে


কামরুজ্জান বাবু::

সাপ শব্দটা শুনলেই অনেকেই তমকে ওঠে! আসলে সাপ সম্পর্কে না জানার জন্যই মূলত এই ভিতি সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সাপ সংরক্ষণ কেন করতে হবে? বা আমরা সাপ সংরক্ষণের কথা আমরা কেন বলে থাকি। অনেক সময় আমরা খাদ্য শৃঙ্খলের কথা বলে থাকি। সাপ না থাকলে কি ভাবে পরিবেশের বিপর্যয় নেমে আসবে তা বলে থাকি। এইবার একটি ডাটা উপস্থাপন করছি। বাংলাদেশের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ডাটা তে দেখা যায় প্রতি বৎসর ইঁদুর দ্বারা আমাদের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয় । নিম্নে তা নিয়ে আলোচলা হল।

ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর প্রাণীটি ছোট হলেও ক্ষতির ব্যাপকতা অনেক গুন বেশি। এরা যে কোনো খাদ্য খেয়ে বাঁচতে পারে। যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। অল্প বয়সে বাচ্চা দিতে পারে। ১৭০০টি ইঁদুর জাতীয় প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে ২২টির অধিক ক্ষতিকারক ইঁদুরজাতীয় প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ইঁদুর আমাদের উৎপাদিত ফসলকে নষ্ট করে আসছে। ক্রম বর্ধমান হারে খাদ্যের প্রয়োজনে দেশে বর্তমানে এক ফসলের পরিবর্তে বহুবিধ ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। এর ফলে ইঁদুর মাঠেই খাদ্য পাচ্ছে। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি করে। ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচ নালাও নষ্ট করে থাকে। সেটা ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে। ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। ইঁদুর শুধু আমাদের খাদ্যশস্য খেয়ে নষ্ট করে না বরং তা কেটে কুটে অনেক ধ্বংস করে। 

এদের মলমূত্র, লোম খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ও ক্রিমিরোগসহ ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়। প্লেগ নামক মারাত্মক রোগের বাহক হচ্ছে ইঁদুর। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের শস্য নষ্ট ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্র কেটে নষ্ট করে। এছাড়া বড় সড়ক বাঁধ, রেললাইনে গর্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে। বন্যার পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়। এ জন্য এর ক্ষতির পরিমাণ পরিসংখ্যানগত ভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কাজেই ফসল ও সম্পদের ক্ষতি রোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দূষণমুক্ত পরিবেশের স্বার্থে ইঁদুর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষেত-খামার, বসতবাড়িসহ সর্বত্র ইঁদুরমুক্ত করার লক্ষ্যে ইঁদুর নিধনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।

একটি (Indiyan Rat snake) দাঁড়াশ সাপ প্রায় ৩ বিঘা ফসলী জমির ইদুর নিধন করতে সক্ষম। এই সাপ নির্বিষ আমাদের দেশের ৮০% সাপই বিষধর না । আমরা বিষধর সাপ মনে করে অনেক নির্বিষ সাপ ও মেরে ফেলি। তাই সাপ না মেরে আমরা যদি সাপ সম্পর্কে জানি বুঝি অযথা ভিতি দূর করে সাপ কে সংরক্ষণ করি তা হলে কারণে অকারণে কীটনাশক ব্যাবহার থেকে সরে আসতে পারি। এতে যেমন বাঁচবে ইঁদুর নিধনের জন্য যেই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা। বিপরিতে আমরা আবার ফিরে আসতে পারবো প্রাকৃতিক কৃষিতে। সুতরাং সাপ মারা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে কৃষককে সহযোগীতা করি। সাপ বেঁচে থাকুক আমাদের প্রয়োজনে।

লেখক: বন্যপ্রাণী সংরক্ষক

জুড়ীরসময়/বাবু/সাইফ