কিন্তু এই উৎসবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতা নিয়ে আমরা খুব কমই ভাবি। আসলে আমরা খেলাধুলার মূল উদ্দেশ্য প্রায় ভুলতে বসেছি।
খেলার মৌসুমে মাঠসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে বিভিন্ন আয়োজক কমিটি ‘গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট’, ‘টিভি-মোটরসাইকেল টুর্নামেন্ট’ ইত্যাদি নানা নামে খেলা আয়োজন করে। তখন এলাকার বিভিন্ন ক্লাব এন্ট্রি ফি দিয়ে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। ক্লাবগুলোর প্রধান চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় কীভাবে ট্রফি জিতে আনা যায়। এখানেই ঘটে সবচেয়ে বড় ভুল।
নিজস্ব খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে ক্লাবগুলো মোটা অঙ্কের টাকায় বাহির থেকে খেলোয়াড় হায়ার করে আনে। যেখানে একটি টিমের এন্ট্রি ফি মাত্র ২ হাজার টাকা, সেখানে প্রতিটি ম্যাচে একজন হায়ারকৃত খেলোয়াড়ের পিছনে ৫ হাজার টাকা বা তারও বেশি খরচ করা হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় আনুষঙ্গিক নানা খরচ।
কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখুন, যে টুর্নামেন্ট জেতার জন্য আমরা নিজের এলাকার খেলোয়াড়দের সুযোগ দিচ্ছি না, বাইরের খেলোয়াড়দের টাকায় ভাড়া করে এনে খেলাচ্ছি, সেটি কি আদৌ টেকসই কিছু গড়ে তুলতে পারবে?
এই অর্থ যদি আমরা স্থানীয় খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ, খেলাধুলার সরঞ্জাম, মাঠ উন্নয়ন বা কোচিংয়ের পেছনে খরচ করতাম, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেই গড়ে উঠতে পারতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার বা ফুটবলার। কিন্তু হায়ারিং প্রথা আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে, তাদের উৎসাহ কমিয়ে দিচ্ছে।
আমরা যদি সত্যিই গ্রাম থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরি করতে চাই, তাহলে এই হায়ারিং প্রথা এখনই বন্ধ করতে হবে। আমাদের উচিত নিজ এলাকার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দল গঠন করা, তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়া।
টুর্নামেন্ট জেতা নয়, খেলোয়াড় তৈরি করাই হওয়া উচিত আমাদের মূল লক্ষ্য। কারণ আজকের এই গ্রাম্য টুর্নামেন্ট থেকেই আগামী দিনের জাতীয় দলের খেলোয়াড় উঠে আসতে পারে। যেন একদিন এমন হয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের আমাদের এই খেলোয়াড় ভাইদেরকে বাহিরের জেলা বা বিভাগগুলো হায়ার করতে বাধ্য হয়।
লেখক: সহযোগী সম্পাদক, জুড়ীরসময়
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন