অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে 'দেশওয়ালী' ভাষা!

অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে 'দেশওয়ালী' ভাষা!

শুভ গোয়ালা::

বাংলাদেশে প্রত্যেক স্থানেই এক একটি আলাদা ভাষা পাওয়া যায়, কিন্তু মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সহ অন্যান্য  উপজেলায় ঘুরলে হরেক রকমের ভাষা শুনতে পাওয়া যায়।  বিশেষ করে চা-বাগান গুলোতে ঢুকলেই এই ভাষা কানে আসে।

বিভিন্ন তথ্যমতে বাংলাদেশে ৪১টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা জীবিত রয়েছে। এদের মাঝে প্রায় ১৪টি ভাষা হারিয়ে যাওয়ার পথে । যার অধিকাংশ ভাষা-ভাষির মানুষ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সহ অনান্য উপজেলায়  বসবাস করেন।

হারিয়ে যাওয়া ভাষার মধ্যে ভাষাভাষি মানুষের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে সবার উপরে দেশওয়ালী ভাষা।
জানা যায়, প্রায় ২শত বছর আগে  ভারতের উড়িশা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা বাগানে চা উৎপাদনের জন্য নিয়ে আসা হয় তাদেরকে। তারপর থেকে তারা এখানে বসবার শুরু করে। তাদের সবকিছুর সাথে মিল পাওয়া গেলেও ভিন্নতা শুধু ভাষার দিক দিয়ে। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে তাদের এই 'দেশওয়ালী' ভাষা। এর কারন খুজতে গিয়ে পাওয়া যায় আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য।  দিন দিন চা-বাগানের মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, যার ফলে তাদের বাচ্চাদের ছোট থেকেই বাংলা এবং ইংরেজিতে তাদের সাথে কথা বলতেই আগ্রহ দেখাচ্ছে। যখন ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে তখন তারা এই ভাষা বলতে পারছে না।  যুগের সাথে তাল মিলাতেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ভাষা। ধারনা করা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে এমন একটি সময় আসবে কেউ এই ভাষায় কথাই বলতে পারবে না।

প্রায় শতবছর বয়সী যমুনা প্রসাদ বলেন, এখন সবাই নিজ সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বাংলা সহ অনান্য ভাষায় কথা বলছে। তবে ভুলে গেলে হবে না এটা আমাদের সংস্কৃতি । এটাকে ধরে রাখতে হবে ।

ভাষা এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণে বছরে দু-একটি উদ্যোগ দেখা যায় ।  চা শ্রমিকরা মনে করেন আমাদের কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রায় এই ভাষা সংরক্ষণে সরকার যদি কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ  গ্রহন করে তাহলে এই ভাষাকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব ।

গবেষকদের মতে, চা বাগান গুলোতে বিভিন্ন নিতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাস থাকলেও সংরক্ষণে নেই কার্যকর উদ্যোগ তাই হারিয়ে যাওয়ার আগেই এসব ভাষা সংরক্ষণের দাবী গবেষকদের।

প্রায় শতবছর বয়সী যমুনা প্রসাদ বলেন, এখন সবাই নিজ সংস্কৃতি বাদ দিয়ে অনান্য ভাষায় কথা বলছে। তবে ভুলে গেলে হবে না এটা আমাদের সংস্কৃতি । এটাকে ধরে রাখতে হবে ।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক  দীপংকর ঘোষ বলেন, চা শ্রমিক দেশওয়ালীরা  বাংলা ভাষা চর্চা করতে গিয়ে নিজস্ব ভাষা হারিয়ে  
ফেলছে। তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

জেলা প্রসাশক মো:ইসরাইল হোসেন বলেন, এ নিয়ে আমাদের হাতে তথ‍্য আসলে আমরা ব‍্যবস্থা নিতে পারবো। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় ভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী  নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণের ব‍্যবস্থা করা যেতে পারে।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন