আব্দুল্লাহ জহুরী::
নতুন বছর ভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন কারণেই স্পেশাল। তবে আমার কাছে এর মানে ছিল একেবারে আলাদা—নতুন শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার আনন্দ, নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, আর দীর্ঘ ছুটির পরে স্কুলে ফেরার সেই অদ্ভুত মাদকতা।
প্রথম দিনের সকালে বাবা বা মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া। একদিকে নতুন বছরের সূর্যের উজ্জ্বল আলো, আরেকদিকে নতুন বই পাওয়ার রোমাঞ্চ। বই হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাতাগুলো উল্টে দেখা, নতুন গদ্য-পদ্যগুলো পড়ে ফেলার অস্থিরতা—এসবের একটা বিশেষ সৌন্দর্য ছিল। বাংলা সাহিত্য পাঠের কবিতা আর সহপাঠের ছোট্ট গল্পগুলো জীবনের প্রথম পরিচয় ছিল সাহিত্যের সঙ্গে।
নতুন বইয়ের অক্ষত পৃষ্ঠা হাতড়ানোর সময় মনে হতো, যেন নতুন এক জগত খুলে গেছে। সেই পাতাগুলো ছিল স্বপ্ন, কল্পনা, আর জ্ঞানের রাজ্য। আর সহপাঠীদের সঙ্গে সেই বই নিয়ে আলাপ—কোন গল্প ভালো লাগল, কোন কবিতা সহজ, আর কোনটা কঠিন—এসব ছিল আমাদের ছোট্ট দুনিয়ার বড় বিষয়।
ছুটির পরে স্কুলে ফেরাটা ছিল আরেক রকমের আনন্দ। বন্ধুরা যেন অনেকদিন পর আপনজনের মতো কাছে ফিরে আসত। নতুন ক্লাসরুম, নতুন বেঞ্চ, আর নতুন স্যার-ম্যাডামের পরিচয় আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যেত। স্কুলের প্রতিটি কোণ নতুন বছরকে আলিঙ্গন করে নতুন উদ্দীপনায় ভরে উঠত।
বাঙালি জীবনের নতুন বছরের আমেজ শুধুমাত্র ছাত্র জীবনে। কর্পোরেট জীবনকে নতুন বছর কোনো ভাবেই স্পর্শ করতে পারেন না।
এখন আর সেই দিনগুলো নেই। জীবনের গতিপথ বদলেছে। বড় হয়েছি, দায়িত্ব বেড়েছে, কিন্তু মনের এক কোণে স্মৃতিগুলো বেঁচে আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি সেই দিনগুলোতে ফিরে যাওয়া যেত! কিন্তু সেটা সম্ভব আজ নয়। তবে এই স্মৃতিগুলো কখনো পুরনো হয় না।
নতুন বছরের প্রথম দিনের অনুভূতিগুলো আমার কাছে কেবল স্মৃতি নয়, বরং একধরনের জীবন দর্শন। সরলতায় ভরা সেই দিনগুলোর মাধুর্য আমাদের বর্তমানের ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এখনো যথেষ্ট।
লেখক: আব্দুল্লাহ জহুরী
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন