মৌলভীবাজারের জুড়ীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সমর্থন করে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি, দেয়াল চিত্র ও লিখন মুছে দিতে ইউপি সদস্য হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) গোয়াল বাড়ী ইউনিয়নের মাগুরা বাজার, শিলুয়া বটগাছের নিচে সড়কে এবং বেশ কয়েকটি দেয়ালে লেখা ও আঁকা নানা চিত্র ইউপি সদস্যের হুমকিতে মুছে ফেলা হয়েছে এমন তথ্য ছড়িয়েছে পুরো এলাকা জুড়ে।
জানা যায়, গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউ পি সদস্য জয়নাল আবেদীন গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনে জড়িত শিক্ষার্থীদের বাড়ীতে গিয়ে নালিশ জানিয়ে অনতিবিলম্বে সেগুলো মুছে ফেলার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তীতে যাতে এরকম কিছু না করে সে বিষয়ে কঠোর নিষেধ দেন। এবং ঐ রাতে সেগুলো মুছে ফেলতে বাধ্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩০ জুলাই সকালে কয়েকটি দেয়ালে এবং রাস্তায় কোটা আন্দোলনের পক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের লিখতে ও আঁকতে দেখা যায়। কিন্তু দুপুরের পর থেকে সে জায়গায় কয়েকবার পুলিশ পরিদর্শন করার পর থেকে এ নিয়ে সমস্ত এলাকা জুড়ে নানান কথা বার্তা শুরু হয়। ঐ রাতে ই ইউ পি সদস্য সেসব শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদেরকে লিখনিগুলো মুছে ফেলতে বাধ্য করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে ও আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে গত ৩০ জুলাই এ কিছু সাধারন শিক্ষার্থী নিজ এলাকার কয়েকটি দেয়ালে ‘বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘বাংলাদেশ’, 'আমার ভাইকে মারলি কেন‘ এবং জহির রায়হানের লেখা আরেক ফাল্গুনের শেষ লাইন 'আসছে ফাগুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুন হবো' স্লোগানগুলো লিখে।
দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি মোছার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীর স্বজনেরা জানান, ঐ রাতে ফজরের আগে লেখাগুলো মুছে ফেলতে বলেন ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নাল আবেদীন, নয়তো তাদেরকে পুলিশ ধরে নিবে বলেন তিনি। আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তাই ভয় পেয়ে যাই এবং রাত ১১ টার পর ওগুলো মুছে ফেলতে ছেলেদের বাধ্য করি। তারা আরো বলেন, আমাদের ছেলেরা একেবারে সাধারণ শিক্ষার্থী, কোনো ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়।
ফোনকলে গ্রাফিতি করা শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান সুয়েব বলেন, ৩০ জুলাই সকালে আমরা গ্রাফিতি করি। ওইদিন রাতে আমাদের ক'জন শিক্ষার্থীকে ইউপি সদস্য বাজারে ডেকে নিয়ে চাপ দেন পরদিন ফজরের আগে গ্রাফিতি মোছার জন্য। তারা বাড়িতে চলে আসলে পরিবারের সবাই তাদের বলে লেখাগুলো মুছে ফেলতে। আমার ভাইরা রক্ত দিচ্ছে, পেশি শক্তি দিয়ে না পারলে ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে তার কিছুটা ঋন পরিশোধ করতে চেয়েছি। আর আমাদের লেখাগুলো তো কোনো দল-মত এর বিপক্ষে নয়। ন্যায়সঙ্গত ছিল। আপনারা বলেন তো যে দেয়ালে 'বাংলাদেশ' শব্দটা লিখা ছিল সেটা তে তাদের কষ্ট হলো কেন? আমরা কি সে কথাটা লিখতে পারি না যে 'আমাদের ভাইকে মারলি কেন? যদি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা দেখাতে পারে যে কেউ, নিজের জিহ্বা কেটে দেব। আমি কেবল সাধারন শিক্ষার্থী হয়ে আমার ভাইদের রক্তের প্রতিবাদ জানিয়েছি যা না করলে আজীবন নিজেকে পাপী মনে হতো।
শিক্ষার্থীদের আরেকজন বলেন, যে জায়গায় বাংলাদেশ লিখেছিলাম তার ঠিক পিছনে বসে মদ-গাজা আর ইয়াবা সেবন করে মাদকাসক্ত পরিচিত কত ছাত্র। কই আমাদের প্রশাসন কিংবা ইউ পি সদস্য তো কোনদিন সে জায়গায় প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আমরা সেখানে মাতৃভুমি বাংলাদেশের নাম লিখাতে আমাদের মা-বাবাকে এভাবে হুমকি ধমকি দেয়া হলো কেন?
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ওরা আমাদের এলাকার সবচেয়ে নম্র,ভদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা তো কোনো ভুল করেনি। তারা তাদের ভাইদের রক্তের দায়ে এতটুকু প্রতিবাদ করতে পারে না? যদি অনৈতিক হয় যেসব পত্র পত্রিকায় প্রতিবাদের সুর শুনা যায় এগুলো বন্ধ করে দেখান তো।
এবিষয়ে ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, ওইদিন সকালে কিছু সাংবাদিক রাস্তায় এবং দেয়ালে লেখা দেখেন এবং তারা প্রশাসনকে অবগত করে। এরপর আমাদের ইউনিয়নেনে চেয়ারম্যানকে তারা জানায়, এজন্য আমি শিক্ষার্থীদের - তাদের পরিবারকে বলেছি পুলিশ আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে লেখাগুলো সম্পর্কে। জোরপূর্বক মোছানোর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমন কিছু হয়নি তাদের শুধু জানিয়েছি বিষয়টি, পরে রাতে তারা মুছে ফেলছে।
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন