আরাফাত জামান::
সালাম (৫৫) ভাইয়ের সাথে পরিচয় ৪-৫ বছর থেকে। প্রতিদিন ৩-৪ বার দেখা হতো। কোন সময় আমি ভুল করলেও তিনি সালাম ও কুশল বিনিময় করতে ভুল করতেন না। গতকাল উনি উনার অফিসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন। খবরটা শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছি। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সুপারি ভর্তি হাসি মাখা মুখখানি।
জানিনা কতটা পারিবারিক অশান্তি হলে, কতটা কষ্ট পেলে একজন মানুষ পরিবার পরিজন ছেড়ে নিজেকে এভাবে শেষ করে দিতে পারেন।
ঘটনা-০১
একজন বিখ্যাত গণিতবিদ তার পাঁচ বছরের সাধনা রিসার্চ পেপার বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু অবহেলা বা অনাকাঙ্খিত কারনবশত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ডকুমেন্টগুলো হারিয়ে ফেলে৷ এর শোকে তিনি পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করতেন, কেউ ভর্তি হতে আসলে তিনি বলতেন, এখানে ভর্তি হবে না এরা চুর। এরা তোমার সব রিসার্চপেপার হারিয়ে ফেলবে৷ বাকি জীবনটা উনার এভাবেই কেটেছিলো।
ঘটনা -০২
আমার পাশের বাড়ি একজন আঙ্কেল তিনি ছাত্র জীবনে খুব মেধাবী ছিলেন। প্রচুর পড়াশোনা করতেন। খাওয়া দাওয়া, খেলাধূলা, আড্ডাবাজি সব রেখে শুধু পড়াশোনা। সবার মুখে মুখে উনার পড়ার প্রশংসা ছিলো। কোন কারন বশত পরিক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস না পাওয়ায় তিনি মানসিক ভাবে খুব আহত হোন। এখন তিনি একা একা বসে থাকেন। ৮-১০ মানুষের মতো স্বাভাবিক না। সমাজের ভাষায় যাকে পাগল বলে।
ঘটনা -০৩
আমার পাশের গ্রামের একজন প্রবাসী ভাই। প্রবাস জীবনের সবটাকা নিজের বউকে দিয়েছেন। মা বাবা সবার থেকে সবচেয়ে আপন যে বউ আর শশুরবাড়িকে বিশ্বাস করেছিলেন তারা উনাকে মারাত্মকভাবে ঠকায়। প্রবাস থেকে আসার পর বউ তালাক দেয়। সবকিছু ছেড়ে মিথ্যা নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। এ শোকে তিনি আজও পাগল। একা একা শুধু হাঁটেন, গভীর রাত পর্যন্ত হাঁটেন। আর একাকি নিজের সাথে কথা বলেন আর হাসেন।
এই ৩ ঘটনার সাথে সালাম ভাইয়ের আত্মহত্যার গল্পের একটা সেতুবন্ধন রয়েছে। সেটা হলো, "সবাই তাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত নন বা জেনেও উদাসীন। "
একজন মানুষকে সৃষ্টির মুল কারন যদি খুব সংক্ষেপে বলি তবে সেটা হলো, দুনিয়ার জীবনকালে সৃষ্টিকর্তার বিধান মতো চলার মাধ্যমে সন্তুষ্টি অর্জন করে পরকালের অনন্ত জীবনের জান্নাত লাভ করা। এ কথার ব্যাপক পরিধি রয়েছে। সেটার দিকে গেলে হয়ত পড়ার ধৈর্য থাকবে না।
সালাম ভাই জীবনে যাই ঘটুক। দার্শনিকের রিসার্চ পেপার যদিও হারিয়েছেন। প্রতিবেশী আঙ্কেলের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল খারাপ বা প্রবাসী ভাইয়ের ধোঁকা খাওয়াটা। এসব কিছু জীবন নামক আত্মজীবনীর একটা অধ্যায় মাত্র। এতে যদি জীবনটাই না রাখি, তবে কি বুদ্ধিমানের কাজ হলো৷
কেউ কি একটা পিঁপড়ের কামড়ের ব্যাথায়, নার্ভগুলো কেটে ফেলতে চাইবেন? নাকি মাথার ব্যাথায় মাথা কাটে মানুষ?
মুমিন জীবনের একটাই সফলতা তাঁর মহান রবের সন্তুষ্টি। সে সর্বাবস্থায় তার রবের ফায়সালার উপর ভরসা রাখে। তিনিই উত্তম পরিকল্পনাকারী এটাই সে মনে প্রাণে মেনে চলে। হাজার অভাব, মহা অসুখ, সম্পদ হারানো, বা কোন স্থীর প্ররোচনা কখনও তাকে তাঁর রব থেকে দূরে রাখতে পারে না। তাঁর একটাই শক্তি,
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ، نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
অর্থ: আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই হলেন উত্তম কর্মবিধায়ক; আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী। (আল-কোরান)
সারকথা, জীবন নামক আত্মজীবনী বইয়ে পরিবার,বন্ধু, শত্রু, হাসি, কান্না, বিপদ, সফলতা, ব্যার্থতা, অসুখ, জয় প্রভৃতি সবই থাকে। কিন্তু এগুলো কেবল একেকটা একেক অধ্যায় মাত্র। বইয়ের সমাপ্তি যেন হয়, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এক আর্দশিক গোলামের পরলোক গমন।
"Live as if you were to die tomorrow. Learn as if you were to live foreve. (Mahatma Gandhi)
লেখক: কাতার প্রবাসী শিক্ষক
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন