অটোরিকশা নিষিদ্ধ নাকি অন্যপথ

অটোরিকশা নিষিদ্ধ নাকি অন্যপথ

খালেদ মাসুদ::

তিন চাকায় শহরের অলিগলি দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। দ্রুত অল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য যাত্রীমহলে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। অল্প যাত্রী কখনও বা একজনকে নিয়ে অল্প সময়ে যাওয়া যায় বলে সবার চাহিদার প্রথম দিকে।

চাহিদা জনপ্রিয়তা থাকলেও দিনদিন তা জনভোগান্তির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত্রতত্র পার্কিং সহ নানাবিধ কারণে জনবিরক্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তার  দুপাশ জুড়ে পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা সরু হয়ে দাঁড়ায়। এতে যান চলাচল সহ হাঁটাচলাতে জনসাধারণের দূর্ভোগ তৈরি হয়। 

রাস্তায় অবৈধ পার্কিং শুধু ব্যাটারিতে অটোরিকশার জন্য নয় সকল ধরনের যানবাহন রাস্তায় পার্কিং করার কারণে এবং অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে জনর্দুভোগের সৃষ্টি হয়। এতে সর্বসাধারণকে অসহায় দেখা যায়। কিন্তু এই সকল অভিযোগ ছাড়াও আরো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার বিরুদ্ধে। 

অভিযোগ গুলার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দুর্ঘটনা। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে জুড়ীতে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে অটো রিক্সা ও মোটরবাইক। যেখানে সেখানে ইউটার্ন,  সিগন্যাল না দিয়ে এক পাশ থেকে  অন্য পাশে চলে যাওয়া। যার ফলে পথচারী কিংবা অন্যান্য যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জুড়ী  সরকারি হাসপাতালের পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় পশ্চিম বড়ধামাই গ্রামের রাকিব আলী বালিম নামের একজন নিহত হন। এর আরও কিছুদিন আগে  সড়ক দুর্ঘটনায় একজন ঠিকাদার নিহত হন। অল্প কয়েকদিন আগে জুড়ীর জাঙ্গিরাই গ্রামে একটি শিশুকে হত্যা করে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সর্বশেষ হিসাব বলছে, সারাদেশের মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৬.৮৪ শতাংশই ঘটে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইকে। এমন ভয়াবহ পরিসংখ্যানের কারণে আদালত সারাদেশে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করেছে।

দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আদালতের এই নির্দেশনা মানা হয় না। আবার কোন কোন অঞ্চলে আইন করে ওই নির্দেশনা মানাতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। এর পিছনে সব থেকে বড় দারি মাসিক চাঁদা। অনেক জায়গায় শোনা যায় বিভিন্ন নেতাদের ছত্রছাড়ায় গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সার স্ট্যান্ড। এবং কোথাও শোনা যায় পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে। যার ফলে চেষ্টা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। 

অটোরিকশার অদক্ষ ও কিশোর চালক হওয়ার কারণে ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন জনসাধারণ। এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ইজিবাইক বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতিও হচ্ছে অনেক বেশি। এসব যানবাহনে বিদ্যুৎ এর অবৈধ লাইন নিয়ে চার্জ দেয়ার ও চুরি করে অটোচার্জ করার অভিযোগ রয়েছে।

এতে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে অনেক। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এসব অবৈধ অটোরিক্সা কেন সর্বত্র বন্ধ করা হচ্ছে না তা জনগণ এখনো বুঝতে পারছে না। যেহেতু আদালত কর্তৃক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে কোন কারণে বা কোন পদ্ধতিতে এইসব অটো রিক্সা দেশে আমদানি করা হয়। এবং পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন এদের লাইসেন্স প্রদান করে। এই লাইসেন্সের মাধ্যমে অবৈধ কে বৈধ করা হচ্ছে। যার ফলে তারা আরো উগ্রভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। জনগণ  সুন্দরভাবে যানবাহন চলাচল করুক।প্রয়োজনে প্যাডেল চালিত রিক্সা  আবারো রাস্তায় নামানো হোক। কিংবা আইন পরিবর্তন করে পরিবেশ বান্ধব করে এইসব অটোরিকশা নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হক। এবং ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করা হোক। যাতে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। জনগন খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চায়।

লেখক:: উপ সাহিত্য সম্পাদক, জুড়ীরসময়।

জুড়ীরসময়/খালেদ/হোসাইন