মোঃ মেহেদী হাসান::
লক্ষ্য অর্জন করতে মানুষের চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। কৃতজ্ঞতার প্রথম ও বড় দিক হচ্ছে, এই অনুগ্রহ যে আল্লাহর দান-সেই বিশ্বাস রাখা। পবিত্র কুরআনে বারবার মানু্ষকে আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।মানবজাতির উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালার প্রথম নির্দেশনার দিকে লক্ষ্য করতে হয়। আর সেটা হলো- ‘পড়!’ অর্থাৎ পাঠ ও অধ্যয়নের নির্দেশ। অতএব নিত্য দিনের যথোপযুক্ত কর্মের শুরুতে আমাদেরকে পড়তে হবে আল্লাহতায়ালার কিতাব- আল কোরআন। যেখানে রয়েছে মানবজাতির দিশা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বহুবিধ সমস্যার সমাধান এবং সঠিক পথের দিক-নির্দেশনা।
পবিত্র কোরআনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে যে, আমরা যে কাজই করি না কেন, প্রতিটি কাজ যেন আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সূসম্পন্ন হয়। একই সঙ্গে মানুষকে উদ্যমী ও পরিশ্রমী হতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফলাফলের জন্য বিশ্বাসীরা আল্লাহর ওপরই নির্ভর করবে এবং ধৈর্য ধারণ করবে। ’-সূরা ইবরাহিম: ১১-১২ এ ছাড়াও শক্তির সঠিক ব্যবহার করতে হবে লক্ষ্য অর্জন-এ আল্লাহ তা’আলা প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে শক্তি, সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রেখেছেন তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। এই শক্তি ও যোগ্যতা ব্যবহার না করা কিংবা অন্যায় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অকৃতজ্ঞতারই একটি রূপ। সুতরাং একজন মুমিনের বিশ্বাস হবে- -নিজের চিন্তাশক্তি ও কর্মশক্তি আল্লাহপ্রদত্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ। -এই গুণ ও যোগ্যতার বিষয়ে অবহেলা করবে না এবং তা অকার্যকর হতে দেবে না। -অন্যায় ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করবে না। -সত্য ও ন্যায়ের ক্ষেত্রে এবং ইসলামী শরিয়তসম্মত উপকারী ক্ষেত্রগুলোতে তা ব্যবহার করবে।
লক্ষ্য অর্জন করতে একটি হাদিস, যাতে বহু শিক্ষা আছে আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ আছে। তোমাকে যা উপকার দেবে সে বিষয়ে প্রলুব্ধ হও। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম-অকর্মণ্য হয়ে বসে থেকো না। কোনো (অবাঞ্ছিত) বিষয়ে আক্রান্ত হলে একথা বল না যে, আমি যদি এটা করতাম তাহলে মনে হয় এটা হত; বরং সর্বক্ষেত্রে বলো আল্লাহর ফয়সালা বাস্তবায়ন হয়েছে; তিনি যা চান তা-ই করেন। কারণ ‘যদি’ কথাটা শয়তানের কাজের পথ খুলে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম) এই হাদিসে চিন্তা ও কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর গভীর শিক্ষা রয়েছে।
ভারসাম্যপূর্ণভাবে গোটা বিষয়টি উম্মতের চিন্তা-চেতনার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। শক্তিশালী মুমিনের ব্যাখ্যা দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, “এখানে শক্তি অর্থ আখিরাতের বিষয়াদিতে উদ্যমী ও কর্মতৎপর স্বভাব। অর্থাৎ তারা আল্লাহর পথে সংগ্রামে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ ইত্যাদি কাজে অগ্রগামী হবে। সালাত, সিয়াম, যিকিরসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও তারা হবে বেশি আগ্রহী।” (শরহে মুসলিম) ইমাম নববী (রহ.) মূলত এখানে মানসিক ও স্বভাবগত শক্তির কথা বলেছেন।
আর ইসলামের দৃষ্টিতে মুমিন জীবনের সকল কাজই আখিরাতের কাজের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুসার করে হয়। হাদিসের শিক্ষা হাদিসে মূলত স্বীয় ঈমানে শক্তিশালী মুমিনকে বোঝানো হয়েছে। দৈহিক শক্তিশালী হওয়া এখানে মূখ্য উদ্দেশ্য নয়। অথবা যদি দৈহিক শক্তিও উদ্দেশ্য হয় তবে দুইজন ব্যক্তি যদি ঈমানে সমানও হয় তবে শক্তিশালী মুমিনের উপকারিতা ব্যাপক এবং দূর্বল মুমিনের উপকারিতা তার নিজের মধ্যেই সীমিত। এ কারণেই শক্তিশালী মুমিনকে দুর্বল মুমিন অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। তবে তাদের দুজনের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। এ কথাটি এজন্য বলা হয়েছে যাতে এ ধারণা সৃষ্টি না হয় যে, দুর্বল মুমিনের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরং তার মধ্যেও অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। সে নিঃসন্দেহে একজন কাফির অপেক্ষা অনেক উত্তম। তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতকে একটি পূর্ণাঙ্গ অসিয়ত করেছেন। চাই দুনিয়া হোক বা দ্বীনের বিষয় হোক যা তাদের উপকারে আসে তা হাসিল করা ও বাস্তবায়ন করা বিষয়ে পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দুনিয়ার লাভ ও আখিরাতের লাভের মধ্যে বৈপরিত্য দেখা দিলে তখন দ্বীনি লাভকে প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ, যদি দ্বীন ঠিক থাকে তবে দুনিয়াও ঠিক থাকেবে। আর যদি দ্বীন নষ্ট করে দুনিয়া ঠিক থাকে তখন তাও একসময় নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর বলা হয়েছে মানুষ যেন সব বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য কামনা করে; যদিও তা সামান্য বিষয়েই হয় না কেন। আর তারা অলসতা ও অক্ষমতার দিকে যেন না ঝুঁকে।
কারণ যেকোনো কাজে সফলতা লাভ করার পূর্বশর্ত এই দুই রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করা নিজের সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করা, আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া এবং কর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পরও যদি কোনো কাজ মানু্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়ে যায়, তখন আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, মানুষ যেন এ কথা না বলে যে, যদি আমরা এমন করতাম তাহলে এমন হত। কারণ, সকল বিষয় মানু্ষের ইচ্ছার উর্ধ্বে। মানু্ষের উচিত এই কথা বলা যে, এটি আল্লাহর নির্ধারণ ও তাঁর ফায়সালা, আর আল্লাহ যা চান তাই করেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নববীর নির্দেশনা অনুযায়ী সফল হওয়ার তাওফিক দিক আমিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন