আব্বা তোমাকে হারিয়ে আজও কাঁদি হৃদয় থেকে

আব্বা তোমাকে হারিয়ে আজও কাঁদি হৃদয় থেকে


আশরাফ আলী::

দেখতে দেখতে আব্বা মারা যাওয়ার ৭ বছর হয়ে গেল। এইতো সেদিন। আব্বা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলাম। তখন প্রায় আমাকেই আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকতে হতো। বছরের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকতে হতো। আর ঠাণ্ডা আসলে তো আব্বার শরীর আরও খারাপ হয়ে যেত। 

হাসপাতালে থাকতে থাকতে আমি নিজেও হাঁপিয়ে উঠতাম। আর সাথে তো আম্মার কষ্ট।  আম্মা আমি আর আব্বার ছোট্ট সংসার ছিল হাসপাতাল। হাসপাতালের সময়গুলো খুব কষ্টে কাটতো। কখন আব্বার শরীরের উন্নতি হবে আর আমরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবো। তবে আমরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আব্বাকে চিরতরে হারিয়ে।

২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাড়ি থেকে আম্মা কেঁদে কেঁদে ফোনে বললেন তোর আব্বার শরীর খুব খারাপ। আত্নীয়-স্বজন সবাই আসছেন আব্বাকে দেখতে। একটু পরে বাড়িতে আবার কল দিলাম আব্বার কি অবস্থা জানতে। কল রিসিভ করলেন খালামনি। তিনি বললেন আব্বার শরীর একিবারে ভালো নয়। তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে। আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবেন সাথে আমিও যেতে হবে। সাথে সাথে সকল কিছু ফেলে রওয়ানা হলাম। আমি বাড়ি যাবার আগেই আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন আম্মা ও বড় ভাইসাব। কুলাউড়ায় আব্বার সাথে জীবিত শেষ দেখা। আব্বা গাড়িতে বসে আমার মাথায় সেই শেষ বারের মতো হাত বুলিয়ে দিলেন। আর আব্বার সেই হাত কখনো আমার মাথায় ছোঁয়া দেয়নি।

সেখানে আব্বার সাথে দেখা করে আমি গাড়িতে উঠি। হঠাৎ বড় ভাইসাব বললেন তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে টাকা আনা হয়নি। সেজন্য আমি আর সিলেট না গিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। পরে টাকা নিয়ে আবার সিলেট যাব। আব্বাকে নিয়ে সিলেট যাবার পর আম্মা বললেন রাতে আর আসার দরকার নেই। সকালে টাকা নিয়ে আসলে হবে। পকেটে যে টাকা আছে রাত অবধি হবে। পরে আর যাওয়া লাগেনি সিলেট। আব্বাকে নিয়ে ঐ রাতেই চলে আসা হয়েছে বাড়িতে। আব্বা ঐ রাতে বাড়ি এসেছেন ঠিকই তবে চিরচেনা সেই আব্বা নয়। আব্বার মৃত লাশটাই এসেছে বাড়িতে। সেই দিন রাতের ঐ স্মৃতি আজও মনে পড়ে। 

আব্বা তোমাকে হারিয়ে আজও কাঁদি হৃদয় থেকে। বাড়ির পাশের ঐ কবরস্থানে তুমি ঘুমিয়ে আছো ঠিকই কিন্তু তোমার কোন খোঁজ পাইনা। কেমন আছো তুমি ছোট্ট এই মাঠির ঘরে? কেমন করে কাটে তোমার দিনগুলো? সেইগুলো জানতে খুব ইচ্ছে হয়।

ওগো আল্লাহ তুমি আমার প্রিয় আব্বাকে ক্ষমা করে দাও। জীবনের সকল দুষ ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তুমি আমার আব্বার প্রতি রহম কর। জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানাও। আমিন

লেখক: সম্পাদক, জুড়ীর সময় 

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন