মো: আব্দুল্লাহ::
মহররম হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি পবিত্র মাসের অন্তর্ভূক্ত। হাদিসে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসের ১০ তারিখকেই আশুরা বলা হয়। আশুরা অর্থ ১০ মহরম। ইসলামি পরিভাষায় মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা নামে অভিহিত করা হয়। সৃষ্টির আদি থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আশুরার তাৎপর্য স্বীকৃত। হিজরি সনের প্রবর্তন মহররম মাসকে আরও বেশি স্মরণীয় করেছে। কারবালার হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা আশুরা ও মহররমের ইতিহাসে নবচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং মহররম ও আশুরাকে আরও বেশি মহিমান্বিত ও অবিস্মরণীয় করে রেখেছে।
এক ব্যক্তি এসে নবীজি সা.-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! রমজান মাসের পর আর কোন মাসের রোজা পালনে আপনি আমাকে আদেশ করেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রমজান মাসের পর তুমি যদি আরো রোজা রাখতে ইচ্ছুক হও তবে মুহাররামের রোজা রাখ। যেহেতু এটা আল্লাহ তা'আলার মাস। এই মাসে এমন একটি দিবস আছে যেদিন আল্লাহ তা'আলা এক গোত্রের তাওবা ক্ববুল করেছিলেন এবং তিনি আরোও অনেক গোত্রের তাওবাও এই দিনে কবুল করবেন। [জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪১]
এই হাদীস থেকে আমরা মুহাররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা ও তাওবা করার নির্দেশনা জানতে পারি। তাই আসুন, পুরো মুহাররম মাস জুড়ে যত বেশি পারা যায় রোজা রাখি। সোম-বৃহস্পতিবার রোজা রাখা এমনিতেই সুন্নাহ। মুহাররমের সোম-বৃহস্পতিবার রোজা রেখে আমরা আল্লাহর কাছে বাড়তি সওয়াবের আশা করতেই পারি! আরো আছে হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বীজের রোজা। যা এ মাসের জন্য বাংলাদেশে ১-৩ আগস্ট ২০২৩ এই ৩ দিন।
এছাড়াও আশুরা উপলক্ষ্যে বিশেষ রোজা তো আছেই। এ রোজা রাখলে আল্লাহ তায়ালা বিগত ১ বছরের সগীরা গুনাহ মাফ করে দেন।
নবীজি সা. হিজরতের পূর্বেও আশুরার দিন রোজা রাখতেন। হিজরতের পর তিনি দেখলেন মদীনার ইহুদীরাও এদিন রোজা রাখে। কারণ মূসা আ.-কে আল্লাহ আশুরার দিন ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ফেরাউনকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মূসা আ. রোজা রাখতেন। তাই ইহুদীরাও তাঁর অনুসরন করে রোজা রাখে। এ কথা শুনে নবীজি সা. বলেন "নবী মুসা আ.এর অনুসরণের ক্ষেত্রে তো আমরাই তোমাদের চেয়ে অধিক যোগ্য ও বেশি হকদার। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এই আশুরার রোজা রাখলেন এবং অন্য মুসলমানদেরকেও তা রাখতে আদেশ করলেন।" [বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৩৩৯৭]
অপর একটি হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূল সা. মুহাররমের ১০ তারিখের সাথে আরেক দিন মিলিয়ে ২টি রোজা রাখার উৎসাহ দিয়েছেন। কারণ ইহুদীরা শুধু মুহাররমের ১০ তারিখ রোজা রাখত। তাদের থেকে মুসলিমদের আমলের পার্থক্য করার জন্য নবী সা. এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারী-তে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. লিখেছেন: আশুরার রোজা তিন স্তরের। সর্বনিম্ন স্তর হলো একদিন রোজা রাখা, এর উপরের স্তর দশ তারিখের আগে নয় তারিখেও রোজা রাখা, এর উপরের স্তর হলো নয়-দশ-এগার এ তিন দিন রোজা রাখা। [বাবু সিয়ামি ইয়াওমি আশুরা]
মহররম মাস-
তাই যাদের সম্ভব হয় তারা ২৮-২৯-৩০ জুলাই এই ৩ দিন রোজা রাখা। সম্ভব না হলে ২৮-২৯ কিংবা ২৯-৩০ জুলাই রোজা রাখা। এটাও সম্ভব না হলে অন্তত ২৯ জুলাই আশুরার দিন রোজা রাখার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মুহাররমের আমল করার তাওফিক দান করুন। শীয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিল সহ অন্যান্য অনৈসলামিক কার্যক্রমে অংশ নেয়া ও দর্শক হওয়া থেকেও আমাদেরকে আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, নয়াবাজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা।
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন