জুড়ীতে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও!

জুড়ীতে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও!


নিজস্ব প্রতিবেদক:

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাপনাপাহাড় চা-বাগান ও কাশিনগর গ্রামের মাঝখানে জুড়ী নদীর ওপর ‘বৃন্দারঘাট সেতুর’ কাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার উধাও হয়েছেন। এক বছর ধরে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। দেড় বছর পূর্বে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ,  মাত্র ৩২ শতাংশ কাজ শেষে ঠিকাদারের লোকজন চলে যান। কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পরিবেশমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেন। তাতেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এ দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে বাতিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই সেতুর কাজের ঠিকাদার হচ্ছেন ভোলা পৌরসভার মেয়র ও ভোলা জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান।

এলজিইডির সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর  ৬০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ‘বৃন্দারঘাট সেতুর’ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ‘মেসার্স মনির ট্রেডার্স’ নামের ভোলার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ভোলা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কাজ সম্পন্নের কথা ছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর শুরু হয়নি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ বাতিলের সুপারিশ করে এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠান।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃন্দারঘাটে লোকজন নৌকায় করে নদীর এপার-ওপারে চলাচল করছেন। নৌকা ভাড়া মাথাপিছু পাঁচ টাকা। স্থানীয় কাপনাপাহাড় বাগানে সাপ্তাহিক হাট বসেছে। নদীর বিপরীত পাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন হাটে কেনাকাটা করতে এসেছেন। কেনাকাটার পর তাঁরা আবারও নৌকায় করে বাড়ি ফিরছেন। নদীর দুই পাশে সেতুর শুধু দুটি ‘অ্যাবাটমেন্ট (পাকার ভিত)’ নির্মাণ করে রাখা। এছাড়া আর কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, নদীর এপারে কাপনাপাহাড় চা-বাগান। আর ওপারে কাশিনগর, বটনিঘাট, পাতিলাসাঙ্গন, ছুটিয়াবাড়ি ও নয়াগ্রাম এলাকা পড়েছে। এসব এলাকার পাঁচ-ছয় হাজার লোক প্রতি দিন নানা কাজে এপার-ওপারে নৌকায় করে চলাচল করেন। এ ছাড়া কাপনাপাহাড় বাগান এলাকার তিন শতাধিক শিক্ষার্থী নদীর ওপারে অবস্থিত পাতিলাসাঙ্গন উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করে। অন্তত ২০০ বছর ধরে লোকজন বৃন্দারঘাট দিয়ে নৌকায় করে চলাচল করছেন।
এলাকাবাসী বলেন, সেতুর কাজ ফেলে রাখায় তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শাহাব উদ্দিনকে জানালে মন্ত্রী দ্রুত সেতুটির কাজ শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান। গত ১ এপ্রিল মন্ত্রী উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গেলে সেখানেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দ্রুত সেতুটির কাজ সম্পন্নের জন্য তাঁর কাছে দাবি জানানো হয়।

কাপনাপাহাড় বাগান এলাকার বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী দেবাশীষ যাদব বলেন, বৃন্দারঘাটে নৌকায় করে নদী পারাপারের সময় প্রতি বছরই চার-পাঁচটি দূর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি প্রবল স্রোতে দুই বার স্কুল শিক্ষার্থীদের নৌকা উল্টে যায়। এতে তাদের বই, খাতা ও কাপড়চোপড় ভিজে নষ্ট হয়। তবে, বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে তাদের আর এ রকম ঝুঁকিতে পড়তে হতো না।
 
এ বিষয়ে ঠিকাদার মনিরুজ্জামান জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘বুঝেনই তো, মালামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

এলজিইডি’র উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলেন, সেতুর কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি জেলা কার্যালয় থেকে ঠিকাদারকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে কাজ শুরু করছেন না। সেতুটির মাত্র ৩২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো অনেক কাজ বাকি।

এলজিইডি’র মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, ঠিকাদার কাজ কাজ শুরু করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। কাজ দ্রুত শুরু না করলে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করার ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ প্রক্রিয়া চলমান আছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে। পরবর্তীতে নতুন টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করা হবে।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/সাইফ