জুড়ীর এই সড়কে মানুষের দুর্ভোগ, মন্ত্রীর নির্দেশেও হচ্ছে না কাজ!

জুড়ীর এই সড়কে মানুষের দুর্ভোগ, মন্ত্রীর নির্দেশেও কাজ হচ্ছে না!


বিশেষ প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় বৃষ্টি হলেই  জুড়ী শহরের ভবানীগঞ্জ বাজার এলাকায় প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে শহরের ব্যবসায়ী  এসড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও  বাসিন্দাদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। সামান্য বৃষ্টিতে বছরের পর বছর এ সড়কের বেহাল দশা হলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।

সম্প্রতি এ সড়ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ নানা মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে স্থানীয় সাংসদ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, এমপি প্রায় দেড় মাস আগে  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে এক সপ্তাহের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোন কাজ শুরু করেন নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের ভবানীগঞ্জ বাজার থেকে ক্লাবরোডের আব্দুল আজিজ মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কের নাজেহাল দশা। অথচ এ সড়ক দিয়ে উপজেলার তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার সাধারণ  মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি নিষ্কাশনের নালা ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের বাজার এলাকায় বার বার পুরাতন ইট তুলে নতুন ইট দিয়ে সলিং করা হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়। যার ফলে পানি জমে থাকে এ কারণে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তাকেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির পানি অনেক সময় তাদের দোকানে উঠে মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়াও দোকানের সম্মুখে পানি জমে থাকার কারণে  ক্রেতারা প্রবেশ করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হন। অনেক সময় যানবাহন উল্টে গিয়ে  যাত্রীরা হন আহত। এছাড়াও বৃষ্টির দিনে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সৃষ্টি হয় চরম দুর্ভোগ।

মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জুড়ী চৌমুহনী থেকে ক্লাব রোড পর্যন্ত ১৩০০ মিটার সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ টেন্ডার পেয়েছে হাসান বিল্ডার্স। ২০২২/২০২৩ অর্থবছরে এ কাজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকার উপরে।

এ সড়কে চলাচলকারী রিকশাচালক আজমীল ইসলাম বলেন, সড়কের এ  স্থানে রিকশা চালাতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। একটু বৃষ্টিতে সড়ক ডুবে গিয়ে কিছুই দেখা যায় না। ফলে অনেক সময় যাত্রী নিয়ে  চলাচলে  অসুবিধার পাশাপাশি দুর্ঘটনায় পড়তে  হয়।

স্থানীয় মা-মণি ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী রিপন দাস বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে সড়কের এমন বাজে অবস্থা হয়েছে। এতে দুর্ভোগে  স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি আটকে দোকানপাটে উঠে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের দুর্দশার আর সীমা থাকে না।

উজ্জ্বল গিফট কর্নারের স্বত্বাধিকারী আবুল ফজল বলেন, আমাদের এ সড়কের  দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই। আমরা ব্যবসায়ীরা এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চাই।

এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সচেতন নাগরিক আশরাফুজ্জামান রিশাদ বলেন, বাজারের এ  রাস্তার বেহাল দশা আর জলাবদ্ধতা যুগ পেরিয়েছে। কিন্তু এখনও হয়নি কোন সুরাহা। বৃষ্টির দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।কর্তৃপক্ষের প্রতি সদয় নিবেদন, আমাদের এই দূর্দশা লাগবে রাস্তাটি সংস্কারসহ জলাবদ্ধতা দূর করে আমাদের স্বস্তি দিন।

পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আনফর আলী বলেন, সড়কের এ অংশে চলাচলকারী জনসাধারণ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা কাজ শুরু করছেন না। সাময়িক ভাবে বেশ কয়েকবার পশ্চিমজুড়ী  ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কাজ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে  ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাসান বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহিদ ইকবাল বলেন, ইতিমধ্যে এ সড়কের কাজ শুরু করার জন্য সকল মালামাল প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে পুরোদমে।

মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন বলেন, এ সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা পেয়েছি।

তাহলে কাজ এখনো শুরু হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরসিসি ঢালাইয়ের  ক্ষেত্রে একটি সার্ভে করতে হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে সার্ভে করে জমা দিয়েছে। সার্ভে ২/১ দিনের মধ্যে অ্যাপ্রুভ হলে কাজ শুরু হবে।

জুড়ীরসময়/মনিরুল/সাইফ