জুড়ী নদীতে অবৈধ মাছের ঘের তৈরির মহোৎসব, বাধছে সংঘর্ষ

জুড়ী নদীতে অবৈধ মাছের ঘের তৈরির মহোৎসব, বাধছে সংঘর্ষ


মনিরুল ইসলাম::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় অবৈধভাবে জুড়ী নদী দখল করে মাছের ঘের তৈরির মহোৎসব শুরু হয়েছে। নদীতে গাছের কাটা ডালপালা দিয়ে এবং বাঁশের বেড়া দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এসব ঘেরে বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ আটকে থাকে ফলে মৃত প্রাণীর পচা গন্ধে এলাকার পরিবেশ ক্রমেই দূষিত হয়ে উঠছে। এসব অবৈধ ঘেরের আশেপাশে সাধারন মানুষ মাছ ধরতে গেলেই বাঁধা দিচ্ছে অবৈধ দখল কারীরা।

এদিকে এ নদীতে  অবৈধ মাছের ঘেরের পাশে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) শুক্রবার দুই গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের  ৬-৭  জন আহত হয়েছেন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

সরজমিনে রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুরের মোকামটিলা গ্রামের ও  পার্শ্ববর্তী পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ধামাই গ্রামের বনগাঁও এর লোকজন  জুড়ী নদীতে নৌকা যোগে  মাছ ধরতে যান। এতে বড়ধামাই গ্রামের বনগাঁও এর লোকজন বাঁধা দেন। এই বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জুমা’র নামাজের পর উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এদিন সন্ধ্যার পর উভয় গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলার জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জড়ো হবার ঘোষণা দিলে জুড়ীরপারসহ আশপাশের জনমনে আতঙ্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

মাইকে সংঘর্ষের ঘোষণার খবর পেয়ে দ্রুত জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনফর আলী ও পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ওবায়েদুল ইসলাম রুয়েল ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর অবৈধভাবে নদী দখল করে কিছু অসাধু ব্যক্তি মৎস্য ঘের তৈরি করেন। এতে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ  বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদী দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসনের কোন নজরদারির না থাকার কারণে অবৈধ ঘের তৈরি করছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। মৎস্য কর্মকর্তার নাকের ডগায় অবৈধ মাছের ঘের তৈরির মহোৎসব চললেও তা বন্ধ করতে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, উপজেলার জুড়ী নদীর বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু ঘের তৈরি করা হয়েছে। নদীতে অবৈধ মাছের ঘের ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ নিধন করা হলেও  মৎস্য কর্মকর্তার নীরব ভূমিকায় স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, নদীতে ঘের তৈরির কারণে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে মাছ শিকার করতে পারছেন না। ঘেরের আশপাশে বরশি, হুইল অথবা বিভিন্ন প্রকারের জাল দিয়ে মাছ শিকারে বাঁধা দেওয়া হয় তাদের।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু ইউসুফ বলেন, নদীতে মৎস্য ঘের তৈরি করা অবৈধ। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, জুড়ী নদীতে অবৈধ মাছের ঘেরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপর আমরা পরিস্থিতি শান্ত করেছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জুড়ীরসময়/মনিরুল/সাইফ