নির্বাচনঃ জনসেবা নাকি ব্যবসা?



খালেদ মাসুদ::

দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের হাওয়া।নির্বাচন একটি উৎসব পরিনত হয় এদেশে। এ দেশে দল বেঁধে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার একটি রীতি দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে। নির্বাচন এলে দেশে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ নিজ নিজ ওয়ার্ডের কেন্দ্র  ছুটে যান পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে।

নির্বাচনের ফলাফলে একটি বিষয় প্রায়ই দেখা যায়- কালো টাকার মালিক বা দুর্নীতিবাজরা নির্বাচিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা, নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে ভোটাররা অসচেতন থাকার কারণেই এমনটি ঘটছে। এর ফলে রাজনীতি দুর্নীতিবাজ, খুনি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দখলে চলে যাচ্ছে, যা বিপজ্জনক।এছাড়াও বিশেষত সিলেট অঞ্চলে অনেক প্রবাসীদের এখন নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা যায়। 

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অনেক আশা আকাঙ্খা উপলব্ধি করা যায়। এই যেমন,জনগণ চায় সৎ, শিক্ষিত, চরিত্রবান, আদর্শবাদী ও সমাজসেবার মানসিকতাসম্পন্ন যোগ্য মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হোক। বস্তুত যারা সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে থাকবে, কেবল তারাই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকারী।

এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে সক্ষম ব্যক্তিকেই ভোট দেয়া কর্তব্য বলে মনে করা উচিত। যারা ঘুষ খায়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পায়ে ধরে, ক্ষমতায় গেলে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে, তাদের বর্জন করতে হবে।

উল্টো দিকে প্রার্থীরাও অনেক আশা দিয়ে থাকেন জনগণকে। এবং অনেকে বিপুল সংখ্যক অর্থ ব্যয় করে থাকেন।কিন্তু নির্বাচন কমিশন  ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। অন্যদিকে সদস্য পদে প্রত্যেক প্রার্থী সর্বোচ্চ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয় ৫ লাখ টাকা, ব্যক্তিগত খরচ ৫০ হাজার টাকা করতে পারবেন। সদস্যপদে প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয় এক লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত খরচ ১০ হাজার টাকা করতে পারবেন বলে অনুমতি দেয়।

প্রার্থীদের দেখা যায়,প্রচার-প্রচারনায়(পোস্টার,গান বাজানো, মত বিনিময় সভা) অনুমতি দেওয়া টাকার কয়েক গুন ব্যয় করতে।অনেকে আড়ালে ইঙ্গিতে অর্ধ কোটি বা তারও বেশি খরচ করার আভাস দেন।এইসব নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি দেখা যায়।প্রবাসে কয়েক লাখ টাকা বেতনের কাজ ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন।এসব টাকার ছড়াছড়ি জনগণের মনে প্রশ্ন জাগায়, নির্বাচনে কি আদৌও জনগণকে সেবা করার জন্য প্রার্থী হোন নাকি নিছক ব্যবসার জন্য।

প্রার্থীদের দেখা যায় টাকার বিনিময়ে অশিক্ষিত দরিদ্র ভোটারদের ভোট হাতিয়ে নিতে।অন্যদিকে টাকা না দিলে ভোট না দেওয়ার কথা বলেন কেউ কেউ।অনেক আজগুবি আশার আলো দেখান কোন কোন প্রার্থীর মুখে শোনা যায়। সাধারণ মানুষ চিন্তা করে, এতো টাকা খরচ করার রহস্য কি।যেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের বেতন ১০,০০০ টাকা ও সদস্যের বেতন ৮০০০ টাকা।জনগনকে সেবার দেওয়ার জন্য কি এতো টাকা খরচ করতে হয়।নাকি এগুলো ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ? বিজয়ী হলে কি লাভ কয়েকগুন?... 
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এবিডি