হজ্জের দিন সমুহে পঠিত দোয়া সমুহ

হজ্জের দিন সমুহে পঠিত দোয়া সমুহ


মোঃ মেহেদী হাসান::

ইহরাম বেঁধে হজের জন্য প্রস্তুত হজ পালনকারীরা। ৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত হজপালনকারীরা মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান করবে। সবার একটাই চাওয়া জীবনের গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ করা।

মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থানকালে হজ পালনকারীরা আল্লাহর দরবারে গোনাহ মাফে অশ্রু বিসর্জন দেবে। ক্ষমা ও কল্যাণ লাভের আশায় তাসবিহ, তাহলিল ও ইসতেগফারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করবে।

দিনগুলোতে কুরআন ও হাদিসের শেখানো ভাষায় দরবারে ধরণা দেবে মুসলিম উম্মাহ। হজের ৫দিন যে দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া জরুরি তা হজ পালনকারীদের জন্য তুলে ধরা হলো-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো আরাফার দোয়া। আর আমি ও আমার আগেকার নবিগণ যে শ্রেষ্ঠ দোয়া করেছেন তাহলো- 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু; বিইয়াদিহিল খাইর; ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কেনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তাঁরই জন্য রাজত্ব ও তাঁরই জন্য সব প্রশংসা। তাঁর হাতেই রয়েছে সব কল্যাণ। তিনিই বাঁচান ও তিনিই মারেন। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’
তাবারানির বর্ণনায় এসেছে, ‘দোয়াটি আরাফার দিন সন্ধ্যায় পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্য বর্ণনা এসেছে, ‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের নামাজের শেষে সালাম ফিরানোর পরপরই এ দোয়াটি ১০বার পড়বে; সে ব্যক্তির জন্য প্রতি বারের বিনিময়ে ১০টি নেকি লেখা হবে; ১০টি গোনাহ মুছে দেয়া হবে এবং তার মর্যাদার স্তর ১০টি করে উন্নীত করা হবে।
এছাড়াও এটি তার জন্য মন্দ কাজ থেকে রক্ষাকবচ হবে এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে সে নিরাপদ থাকবে। আর কোনো পাপ তাকে স্পর্শ করবে না (অর্থাৎ তাকে ধ্বংস করতে পারবে না) শিরক ব্যতিত। অতঃপর সে ব্যক্তি হবে সবার চেয়ে উত্তম আমলকারী। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

 ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’
অর্থ : ‘আল্লাহ পবিত্র। সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ সবচেয়ে মহান।’ (মুসলিম, মিশকাত)

 আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনিয়ায়া ওয়া আহলি ওয়া মালি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায়, আমার পরিবার ও বিষয়-সম্পদে তোমার ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)

  আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি ওয়া দালায়িদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল রিজালি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভিরুতা ও কৃপণতা থেকে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের জবরদস্তি থেকে।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

 আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউজুবিকা মিন আরজালিল উমুরি ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আজাবিল কাবরি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভিরুতা থেকে; আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা থেকে; আশ্রয় প্রার্থনা করছি জ্বরাজীর্ণ বয়স থেকে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফেতনা ও কবরের আজাব থেকে।’ (বুখারি ও মিশকাত)

  আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নিমাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফাতিকা ওয়া ফুজাআতি নিক্বমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাত্বিকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার থেকে মোতার নেয়ামত চলে যাওয়া থেকে; তোমার দেয়া সুস্থতার পরিবর্তন থেকে; তোমার শাস্তির আকস্মিক আক্রমণ থেকে এবং তোমার যাবতীয় অসন্তুষ্টি থেকে।’ (মুসলিম, মিশকাত)

 ‘রাব্বি আয়িন্নি আলা তুয়িন আলাইয়্যা ওয়াংছুরনি ওয়া লা তাংছুর আলাইয়্যা ওয়াহদিনি ওয়া ইয়াস্সিরিল হুদা লি।’
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সহায়তা দাও এবং আমার বিরুদ্ধে সহায়তা করো না। আমাকে সাহায্য কর এবং আমার বিরুদ্ধে সাহায্য করো না। আমাকে হেদায়াত দাও এবং আমার জন্য হেদায়েতকে সহজ করে দাও।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মিশকাত)

 ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাহদিল বালায়ি ওয়া দারাকিশ শাক্বায়ি ওয়া সুয়িল ক্বাজায়ি ওয়া শামাতাতিল আ’দায়ি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমকারী বিপদের কষ্ট থেকে; দুর্ভাগ্যের আক্রমন থেকে; মন্দ ফায়ছালা থেকে এবং শত্রুর হাসি থেকে।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিকা; আল্লাহুম্মা মুছার্রিফাল কুলুবি ছার্রিফ কুলুবানা আলা ত্বাআতিকা।’
অর্থ : ‘হে হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের ওপর দুঢ় রাখ। হে অন্তরসমূহের রূপান্তকারী! আমাদের অন্তরসমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, মুসলিম)

 ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা কর।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)

 ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সুপথের নির্দেশনা, পরহেজগারিতা, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং স্বচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম, মিশকাত)

সাইয়্যিদুল ইসতেগফার
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়াটি পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে সে জান্নাতি।’ (বুখারি)-
اَ ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাত্বাতু। আউজুবিকা মিন শার্রি মা ছানা’তু। আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি। ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার দাস। আমি তোমার কাছে কৃত অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপরে সাধ্যমত দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মগুলির অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার পানাহ চাচ্ছি। আমার ওপরে তোমার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। এবং আমি আমার পাপসমূহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতিত ক্ষমা করার কেউ নেই(বুখারীওমিশকাত)আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে উক্ত দোয়া গুলো করার তাওফিক দিক আমিন এবং তিনি আমাদের দোয়া কবুল করুক আমিন।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এবিডি