ক্রুসেড-মহা বিপর্যয়ের শুরু

ক্রুসেড-মহা বির্পযয়ের শুরু


খালেদ মাসুদ::

ক্রুসেড-পবিত্র ধর্মযুদ্ধ

ক্রুসেড-ইসলামকে ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্মুল করার এক ভয়ংকর খেলা।সমগ্র খ্রিষ্টজগৎ নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে একজোট হয়ে মুসলিম উম্মাহের বিরুদ্ধে শুরু করে ষড়যন্ত্র।যার সূচনা হয়েছে পবিত্র ভুমি জেরুজালেমকে নিয়ে ৪৮৮ হিজরি মোতাবেক ১০৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এবং শেষ হয় ৮০২ হিজরি মোতাবেক ১৪০০ সালে।আজও ক্রুসেড থেমে যায় নি, এখনও চলছে সেই নীল নকশা। আজ প্রথম ক্রুসেড সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবো।

১০৯৫ সাল,পোপ দ্বিতীয় আরবান ক্লেয়ারমন্ট নামক ফরাসি ধর্মাশ্রমের বাহিরে ঐতিহাসিক ভাষন প্রদান করেন।তিনি সেখানে,খ্রিষ্ট বাহিনীর বারবার পরাজয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনান।সেইসাথে উপস্থিত সবাইকে তুর্কিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন।এই অভিযানকে তিনি 'ক্রইসেদ' নাম দেন।সেখান থেকে 'ক্রুসেড'নামে আখ্যায়িত হয়।তিনি একে পাপ মোচনের যাত্রা বলে অভিহিত করেন।ঘোষণা দেন'যারা জেরুজালেমে যাবে এবং মুসলমানদের হত্যা করবে,তাদের অতীতের সকল পাপ মোচন হবে।'

সেলজুক রাজকুমার আরসালান জানতে পারেন, কিছু অদ্ভুত লোক তার এলাকায় প্রবেশ করেছে।যারা ফ্রঞ্জ নামে পরিচিত। তাদের উপর নজরদারি চালান,পরবর্তীতে তাদের সমুলে নির্মুল করে বিতাড়িত করেন।পরের আবারও তারা উৎপাত শুরু করলে, তিনি তাদের গুরুত্ব না দিয়ে মোকাবিলা করেন।এবার তিনি তাদের বিরুদ্ধে সফল হতে পারলেন না।নাইটরা তার নেকেইয়ে শহর দখল করে।আন্টওকের রাজা, তৎকালীন দামেস্কের রাজা দাকুক ও মুসুলের রাজার কাছে সাহায্য চান,তারা তাতে রাজি হয়।কিন্তু সমন্বিত বাহিনী আসার আগেই আন্টিওকের পতন হয়।যদি তারা আসতে ইতিহাস অন্য রকম লিখা হতো।বর্বর নাইটরা শহরে প্রবেশ করে হত্যাযজ্ঞ চালায়।তারা দক্ষিণে মারা শহর অবরোধ করে।শহরে দেখা দেয় চরম খাদ্য সংকট। কাউকে হত্যা করবে না বলে আশ্বাস দিয়ে তারা চরম বিশ্বাসঘাতক করে।মারা শহরের যা করলো তা জবাইয়ের সমান।মুসলমানদের ধরে গরম পানিতে ফেলে দিতো এবং স্যুপের মতো সিদ্ধ করতো।শিশুদের জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দিতো।তারা সেলজুক তুর্কিদের হত্যা করে কুকুরকে মাংস খাওয়াতো।

আশ্বর্য হলেও সত্য, এতো নির্মমতার পরেও মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয় নাই।হোমসের রাজা শহর রক্ষার জন্য ফ্রাঞ্জদেরকে ঘোড়া উপহার দেন।ত্রিপোলির সুন্নি শাসক, শিয়া ভুমি দখলের আমন্ত্রণ জানান।কিন্তু তারা উপহার ও আমন্ত্রণ গ্রহন না করে উল্টো ত্রিপোলি দখল করে।মিসরের ফাতেমী শাসকে ক্রুসেডারদের আব্বাসীয় ও সেলজুকদের বিরুদ্ধে সফলতা কামনা করেন।তিনি জেরুজালেম কে ক্রুসেডারদের সাহায্য নিয়ন্ত্রণ আনার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন।তিনি তাদের বার্তা পাঠিয়ে বলেন,জেরুজালেম তার অধীনে,ইসায়ীরা নিরাপদে তীর্থযাত্রা করতে পারবে।কিন্তু ক্রুসেডারা প্রত্যাখান করে বলে,নিরাপত্তা নয় দখলের জন্য এসেছে তারা।

এরপর তারা নির্বিগ্নে অনেক শহর দখল করে। খুব কম শহর বর্বরতার বিরুদ্ধে দাড়াতে পরেছে।অতপর জেরুজালেম অবরোধ করে।আবার সবাইকে মাফ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।কিন্তু মুসলিমরা তাদের ফাঁদ বোঝতে অক্ষম ছিলো।শহরের পতনের পর, তারা নারকীয় তাণ্ডব শুরু করে। নাইট সৈনিকের ডাইরি থেকে জানা যায়"রাস্তায় শুধু মানুষের মস্তক,হাত পায়ের স্তুপ দেখা যেতো,হাটু অবধি রক্তে ডুবে গিয়েছিল। অন্যদিকে,ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ অ্যাডওয়ার্ড গিবন লিখেছেন, ক্রুসেডারা ২দিনে ৭০,০০০ মানুষ হত্যা করে,ফলে শহরে কোনো মুসলমান ছিলো না।এমনকি ইহুদিদের সিনাগগে ঢুকিয়ে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়।শহরের খ্রিষ্টানরাও সস্তিতে ছিলো না।কারণ, তারা রোমান চার্চ মানতো না,মানতো প্রাচ্যের চার্চ।তাদের সকল সম্পদ ক্রুসেডার বাজেয়াপ্ত করে।

জেরুজালেম নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তারা নতুন চারটি রাজ্যের ঘোষণা দেয়।এগুলো হলো আন্টিওক,এডেসা,ত্রিপোলি এবং জেরুজালেম। তবে জেরুজালেম নিয়ন্ত্রণ ছিলো বেশি সুখকর ও গর্বের।অতপর শতবছর পর,সুলতান সালাউদ্দীন আয়ুবীর আগমন,এবং বিজয়।আজও জেরুজালেম ক্রুসেডারদের নিয়ন্ত্রণ, মুসলমান জাতি এখনও ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে,আবার সালাউদ্দীন আসবেন আবার জিহাদের ডাক দিবেন।

সুত্রঃ

১.ডেসটিনি ডিজারেপ্টেড-তামিম আনসারী
২.ক্রুসেড খিস্টানদের হিংস্র যুদ্ধের ইতিহাস -ড.রাগিব সারজানি
৩.ক্রুসেড-আসাদ হাফিজ 
৪.ইন্টারনেট।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এস