গুরুত্বের বিবেচনায় আমাদের রমজান

আকমল হোসাইন::

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ কল্যাণের বারিধারা নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান আমাদের মাঝে বছর ঘুরে আসে এবং যায়। প্রতিবছরই আমাদের জীবনের পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটে এবং যথারীতি রমজান আমাদের মধ্যে চলে যায়। 

আমরা পবিত্র মাহে রমজানের কদর করার চেষ্টা করি এবং এর জন্য আমাদের বাহ্যিক আভ্যন্তরীণ প্রস্তুতিও লক্ষ্যণীয়ভাবে পরিবর্তন হয় কিন্তু এই রমজান থেকে আমরা আমাদের জীবনের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করতে অনেক সময় এই ব্যর্থতার পরিচয় দেই। পবিত্র মাহে রমজানের অর্থই হচ্ছে সংশোধনের মাস আত্মসংযমের মাস আত্মপর্যালোচনা মাস আত্ম গঠনের মাস তাকওয়ার সর্বোচ্চ পৌঁছার জন্য বান্দার বিশেষ ট্রেনিং সেশন। 

পবিত্র মাহে রমজানের রমজান শব্দের অর্থই হচ্ছে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দাও। মানুষের বিতরের যত অশুভ শক্তি রয়েছে তাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে পবিত্র এবং শুদ্ধ একটি আত্মা দেয়ার জন্যই পবিত্র মাহে রমজানের আগমন ঘটে আমাদের জীবনে প্রতিবছর। এ কারণেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন অনেক রোজাদার আছে যারা শুধু উপোস থাকার ছাড়া আর তাদের কোনো উপকার হয় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বক্তব্য ছিল

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। আল-বাক্বারাহ : আয়াত: ১৮৩

আল্লাহ আমাদের উপর ফরয করেছেন যেভাবে আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর এটা ভালো ছিল।

শুধুমাত্র এটা উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরয নয় এটা পৃথিবী সৃষ্টি থেকে প্রত্যেক উম্মতের উপর আল্লাহ রোজাকে ফরজ করে দিয়েছিলেন ।

আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে আসমানী কিতাব নাজিল এর দিক থেকেও এই পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব অনেক মর্যাদাবান।

পবিত্র মাহে রমজানের 6 তারিখে মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর তাওরাত নাযিল হয়।

১৮ তারিখে দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যাবুর।

১৩ তারিখে ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ইঞ্জিল নাযিল হয়।

১৭ রমজান ইসলামের প্রথম সরাসরি যুদ্ধ বদরের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় ও অষ্টম হিজরীতে ২০ রমজান মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণতা পায়।

এবং সাহাবীদের জমানায় আমর ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর নেতৃত্বে ১৩ রমজান জেরুজালেম মুসলমানদের করায়ত্তে আসে এবং এ মাসেই সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করে ইসলামের প্রথম শহীদের মর্যাদা লাভ করেন।

নৈতিক দিক থেকেও পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব এত বেশি যে স্বাভাবিক সময়ে একটি ফরজ আদায় করলে যেসব হয় তাকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পবিত্র মাহে রমজানের ৭০ টি ফরজ এর সমান হয় একটি ফরজের মর্যাদা।

বৈজ্ঞানিক দিক থেকে পবিত্র মাহে রমজানের চেয়ে গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে তা আপনাদের সকলেরই জানা রয়েছে। আজকাল বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের আপনারা রমজানের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত দিক সম্পর্কে অবগত আছেন আমি শুধু বলতে চাই ডাক্তার বানকিম "ফাস্টিং ফর হেলথ "বইয়ে তিনি লিখেছেন হূদরোগ ,উচ্চ রক্তচাপ ,বয়স জনিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘদিনের মাথা ব্যথা ইত্যাদি রোগের জন্য পবিত্র মাহে রমজান হচ্ছে সর্বোচ্চ চিকিৎসা।

এছাড়াও পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনকে নাযিল করেছেন।

এ মাসেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেন এবং জাহান্নামকে তালাবদ্ধ করে দেন। (সহি বুখারি হাদিস নং ১৮০০)

এই মাসেই রয়েছে পবিত্র একটি রজনী যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই মাহে রমজান দোয়া কবুলের মাস হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন প্রতিদিন এবং রাতে জাহান্নাম থেকে পান তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়। (আহমদ৭৪৫০)

হাদিসে কুদসীতে রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে রোজাদারের পুরস্কার আল্লাহ নিজেই । (সহি বুখারী ১৮০৫)

পবিত্র মাহে রমজানের রোজাগুলো যদি কোন বান্দা আন্তরিকতা এবং সংশোধনের নিয়তে পালন করে থাকেন তাহলে তার জীবনের অতীতের সকল গুনা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মাফ করে দেন। (সহি বুখারী হাজার ১৯১০ )

জান্নাত লাভের পথ হিসেবে পবিত্র মাহে রমজানকে একটি পবিত্র সময় হিসেবে বান্দার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বলা হয় কাকে।

যেমন সহীহ বুখারীতে এসেছে জান্নাতের একটি স্পেশাল দরজা থাকবে যার নাম হবে রাইয়ান এটা দিয়ে শুধুই রোজাদাররা প্রবেশ করবেন এবং সর্বশেষ রোজাদার ব্যক্তি প্রবেশ করার পরে এই দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ( ১৭৯৭)

পবিত্র মাহে রমজান যদি আমরা আমাদের জীবনের সংশোধনের উদ্দেশ্যে কাজে লাগাতে পারি তাহলে কিয়ামতের দিন রোযা এবং কুরআন বান্দার পক্ষে সুপারিশকারী হয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।

(মুসনাদে আহমদ ৬৬২৬)

রোজা কেয়ামতেরদিন মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ হবে । যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে তাকে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছর ধরে রাখা হবে। সহীহ বুখারী১৮৯৪

এবং পবিত্র মাহে রমজানের রোজার কারণে বান্দার মুখের ভিতর থেকে যে গন্ধ আসে সে গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের চেয়েও প্রিয় (সহি বুখারী ১৮৯৪)

এবং রোজাদারের জন্য দুটি খুশির সময় হয়ে থাকে একটি হচ্ছে ইফতারের সময় আরেকটি হচ্ছে যখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সরাসরি রোজাদার বান্দা দেখতে পাবেন কেয়ামতের দিন। (সহি বুখারী ১৮০৫)

এভাবে পবিত্র মাহে রমজানের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন এবং হাদীসে অসংখ্য ফজিলত এবং গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। আসুন আমরা পবিত্র মাহে রমজানকে আমাদের জীবনের প্রতি বছর অতিবাহিত যেভাবে হয় সেভাবে না করে এবার কার রমজানকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান থেকে আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা করি। এবং পবিত্র মাহে রমজান যেন আমাদের জীবনের পরিবর্তনের সুপার হিসেবে কাজে লাগে সে অর্থে আমরা নিম্নোক্ত কাজগুলো করার জন্য চেষ্টা করি। সর্বোত্তম পন্থা পবিত্র মাহে রমজানের রোজা গুলো পালন করার চেষ্টা করি।

পবিত্র মাহে রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও তাফসির অধ্যয়ন চর্চা এবং গবেষণার কাজে আত্মনিয়োগ করি।

পবিত্র মাহে রমজানে বেশি বেশি ইবাদত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য চেষ্টা করি কমপক্ষে ২/৪/৬ রাকাত হলেও প্রতিদিন পড়ার চেষ্টা করি পবিত্র মাহে রমজানের প্রতিদিন কিছু না কিছু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার চেষ্টা করি।

লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করার জন্য শেষ দশ দিনে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালায় সঠিক নিয়মে সেহরি এবং ইফতারের করার চেষ্টা করি।

রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। অবসর সময়গুলো আল্লাহর জিকির এ ব্যস্ত রাখী। সমাজ জীবনে বাসায় পরিবারে তিনি পরিবেশ সৃষ্টি করি।

কোরআন নাজিলের মাস হিসাবে কোরআনের মর্ম উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। সর্বাবস্থায় বেশি বেশি ইসতাকফার করে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা নেয়ার চেষ্টা করি।

পরিশেষে আল্লাহর রাসূলের একটি বাণী দিয়ে শেষ করতে চাই দীর্ঘ হাদিসের একটি অংশ যাতে তিনি বলেছেন যে রমজান মাস পেল এবং গুনাহ মাপ করাতে পারল না তারচেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে। আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হতভাগাদের দলে শামিল না করে পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রমজান পালন করার তৌফিক দান করুন আমিন

লেখক: শিক্ষার্থী, সাইপ্রাস

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এস