"মুচকি হাসি"


মুচকি হাসি

-মোহাম্মদ ইমরান 

-মা…মা…
-কী হয়েছে মিতু? ডাকছিস কেনো?
-ডাকবো না তো কী করব? কই সকাল বেলা দুটি রুটি খেয়ে স্কুল গিয়েছি, এখন বাড়ি ফিরে এই অর্ধেক ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খাবো?
-মা আমার। ঘরে আর কিছু নেই। এই একটি ডিম ছিল সেটা ভাজি করে, তোর জন্য অর্ধেক রেখে দিয়ে বাকী অংশটুকু আমি আর তোর বাবা ভাগ করে খেয়ে নিয়েছি। কষ্ট করে এটা দিয়ে খেয়ে নে মা। তোর বাবাকে বলবো বিকেলে একটা বড় মাছ কিনে আনতে। রাতে তোকে সে বড় মাছের মাথা দিয়ে ভাত দিব।
-সত্যি দিবে তো?
-হ্যাঁ মা হ্যাঁ। এবার লক্ষ্মী সোনার মতো খেয়ে নে।

মিতু ভাত খেয়ে চলে গেল ঘরে। রায়না বেগম খাবার টেবিলের থালাবাসন গুলো পরিষ্কার করে রাখছেন। তখনি ঘরে প্রবেশ করলেন মিতুর বাবা সেলিম সাহেব। সেলিম সাহেবের এক পা নেই। গত পাঁচ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ওনার ডান পা'টি হারান।

সেলিম সাহেব কে দেখে রায়না বেগম বললেন,
-কী গো কোথায় ছিলেন এতোক্ষণ?
-এই তো মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম।
-এতোক্ষণ লাগে বুঝি নামাজ পড়তে!
-না, ইমাম সাহেবের সাথে গল্প করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো।
মিতু কি বাড়ি এসেছে?
-হ্যাঁ এসে কী কান্ডই না করেছে?
-কী করেছে?
-স্কুল থেকে এসে জুড়েছে অর্ধেক ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খাবে না। তারপর আমি অনেক জোর করে খাইয়েছি এবং বলেছি তুমি বাড়ি ফিরলে একটা বড় মাছ নিয়ে আসবে। রাতে মাছের মাথা দিয়ে ভাত দিব বলেছি তারপর খেয়েছে।

-এই সময় মাছ কেনার টাকাটা কই পাই? এ মাসে যে ভাতা পেয়েছি তাও তো শেষ হয়ে গেছে। আর দর্জির দোকানে কাজ করতে যাইনি দু সপ্তাহ ধরে।
-টাকা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি দিচ্ছি টাকাটা।
একথা শুনে সেলিম সাহেব একটু আশ্চর্য হয়ে বললেন,
-তুমি দেবে!তুমি কোথ থেকে টাকা পেলে?
-সেটা তোমাকে বলবো না। দাড়াও তুমি আমি টাকাটা নিয়ে আসছি।

সেলিম সাহেব চিন্তিত মনে ভাবতে লাগলেন, রায়না কোথ থেকে টাকা পেল? সে তো কোনো কাজকাম করে না। রায়না বেগম ঘর থেকে টাকা নিয়ে এসে স্বামী কে চিন্তিত দেখে প্রশ্ন করলেন,
-কী গো কি চিন্তা করছো?

সেলিম সাহেব সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে টাকাটা হাতে নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন রায়না বেগমের মুখের দিকে চেয়ে।যেন সে মিষ্টি মুখে কোনো একটা কমতি পড়েছে। তারপরও সে মুখের একটু মুচকি হাসিতে কমতিটুকু আবার পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

জুড়ীর সময়/ডেস্ক