মৌলভীবাজারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে ফি আদায় করা হচ্ছে

মৌলভীবাজারে অ্যাসাইনমেন্টের নামে ফি আদায়ের হিড়িক!


নিজস্ব প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ হাজার হাজার টাকা ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অ্যাসাইনমেন্টের নামে কোনো ফি গ্রহণ না করার জন্য সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে নির্দেশনা দিলেও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা মানছে না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করছেন। এমন অভিযোগ এসেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী জানান, আজ আমরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি। ক্লাসের একজন শিক্ষার্থী সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে তুলে মিতু নামের একজন শিক্ষিকার হাতে দেয়।

রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুস সালাম টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফটোকপি বাবদ ২০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

ওই উপজেলার ব্রাম্মণবাজারের জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর দুইজন শিক্ষার্থী বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের জন্য ১৫০ টাকা করে আমাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে।

জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বাবদ কোন ফি নেয়া হচ্ছে না।

এদিকে রাজনগর উপজেলার বিমলাচরণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ২৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, বেতনের টাকা মাফ দিলেও অ্যাসাইনমেন্টের টাকা মাফ দেয়া হচ্ছে না। এ টাকা বাধ্যতামুলক দিতেই হবে। কোন ছাড় দিচ্ছে না তারা।

এই স্কুলের শিক্ষক রিপন আহমদ বলেন, এরকম কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না। অনেকে অনেক কিছু গুজব ছড়াচ্ছে।

রাজনগর উপজেলার কদমহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানা যয়, শিক্ষকরা বলছেন পরীক্ষার ফি বাবদ এ টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রায় ৪ শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ টাকা ক্লাস টিচারের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। যার পরিমান দাড়ায় ৮০ হাজার টাকা।

বিষয়টি স্বীকার করে কদমহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফটোকপি বাবদ ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এই দুইশত টাকার মধ্যে তাদের সম্পূর্ণ খরচ। আমরা তাদের এফোর কাগজে উত্তরপত্র দিয়েছি।

কুলাউড়া উপজেলার কর্মদা ইউনিয়নের বাবনিয়া হাশিমপুর নিজামীয়া আলীম মাদ্রাসায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এসাইনমেন্ট বাবদ ৩০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, আমার পরিবারের ৪ জন শিক্ষার্থী আছেন এই মাদ্রাসায়। সবার এসাইনমেন্ট বাবদ ৩০ টাকা করে দিয়ে আসছি।

এবিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও: আহসান উদ্দিন বলেন, প্রশ্ন ফটোকপি বাবদ ৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় মাধ্যমিক কর্মকর্তা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেছি এবং তাদের স্পষ্ট বলা হয়েছে এসাইনমেন্ট বাবদ কোনো টাকা নেয়া যাবে না। যারা তখন অনুপস্থিত ছিলো তারা এসব কান্ড ঘটাচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা এসব কান্ড ঘটাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জুড়ীরসময় /ডেস্ক