দাসের হাতে রক্ষা পায় সভ্যতা


হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা সভ্যতা কয়েক মুহূর্তে তলোয়ারের নিচে ধুলোর মতো উড়ে যায়।

উত্তর দিক থেকে আসা বর্বর মোঙ্গল তাতারিদের হাতে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যেতে থাকে বিভিন্ন দেশ,সভ্যতা, সাম্রাজ্য।জি জিয়া, জিন আর সং সাম্রাজের পতন করে চেঙ্গিস খানের র্দুধর্ষ বাহিনী। তেমুজিন খানের বিশ্বজয়ের আকাঙ্খা তার উত্তরসূরীরা অনেক কাল অব্যাহত রাখেন।

এবার চোখ যায় মধ্যপ্রাচ্যের দিকে।

সিল্করোড দিয়ে ঢুকে ওতরার,বুখারা,সমরকান্দ, মা ওয়ারা উন্না,উরগঞ্জের পতন ঘটে বর্বর হত্যাকান্ডের মাধ্যামে।যাতে শহিদ হন কয়েক মিলিয়ন মানুষ।গড়ে উঠে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য।মোঙ্গল সাম্রাজ্য।

মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে প্রথম বিজয় লাভ করেন খাওয়ারিজম শাহ সুলতান জালাল উদ্দীন। তার সঙ্গে ছিলে র্দুধর্ষ তুর্কি সেনাপতি তিমুর মালিক।পারওয়ান উপত্যকায় মোঙ্গলদের এনে কচুকাটা করেন তিমুর ও সুলতান।কিন্তু ভুল বোঝাবুঝি তাদের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।অল্প কিছুদিনের মাথায় জালাল উদ্দীন ও পরাজিত হোন চেঙ্গিস খানের হাতে।

সময় অনেক গড়িয়ে যায়।খাকান চেঙ্গিস খানের মৃত্যু পর খাকান হোন তার বড় ছেলে জোচি খান। তার আমলেও চলতে থাকে বর্বরতা।বাটু খান, ওর্দা খান,মোঙ্কি খান,বারকি খান,হালাকু খান ও সেই পথের যাত্রী।

তাদের সামনে দাড়াতে পারেনি আব্বাসীয় সাম্রাজ্য।

একে একে জ্ঞান বিজ্ঞানের শহর বাগদাদ, আলেপ্পো,দামেস্ক ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়।অনেকে তাদের ইয়াজুজ মাজুজ হিসেবে মনে করতো।লোকে মনে করতো মোঙ্গলদের হয় তো কেউ পরাজিত করতে পারবে না।

অবশেষে মোঙ্গলদের জয়রথ থামান মামলুক সুলতান আল মালিকুল মাজাফ্ফর ওরফে মাহদুদ বিন মামদুদ বিন সাইফ উদ্দিন কুতুজ।সিরিয়া থেকে মিশর আক্রমণের পূর্বে হালাকু খান মোঙ্গলদের স্বভাব সুলভ “হয় আত্মসমর্পণ নয় ভয়াবহ মৃত্যু” এই হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠালেন মিশরের সুলতানের কাছে।চিঠির উত্তরটা সুলতান কুতুজ দিয়েছিলেন মোঙ্গল দূতের শিরশ্ছেদ করে।সুলতান কুতুজ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোঙ্গলদের মোকাবেলা করার। ঠিক সেই সময়ে মিশরে মস্ত বড় ইসলামিক স্কলার ছিলেন শেখ ইজ্জউদ্দিন আব্দুস সালাম । তিনি তার বক্তব্যে সুপষ্টভাবে সুলতান কুতুজের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেন এবং জনগণকে দলে দলে কুতুজের বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান করলেন। এছাড়া সিরিয়া থেকে আরেক কিংবদন্তী কমান্ডার দ্য প্যান্থার" আল মালিক আল জহির রুকন আল দিন বাইবার্স আল বুনদুকদারি আবু আল ফুতুহ" কুতুজের সাথে যোগ দিলেন। যার ফলে তিন লক্ষ্য(কোন মতে ৫লক্ষ) যোদ্ধা নিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন হালাকু খান।হঠাৎ খবর আসে খাকান মোঙ্কি খান মারা গেছেন।খাকান হওয়ার জন্য কারাকোরামের চলে যান হালাকু খান।রেখে যান ২টুমেন যোদ্ধা নোইয়ান কিতবুকার নেতৃত্বে।মোঙ্গলদের সাথে যোগ দেয় ক্রুসেডাররা। জর্জিয়া রাজ্য,সিলিসিয়ান আর্মেনীয়া বাহিনী যোগ দেয়।

আইন জালুত প্রান্তে বাইবার্স টেনে নেন মোঙ্গল বাহীনিকে। সেই যুদ্ধের মুসলিমরা প্রথম বার মিদফ নামক হ্যান্ড ক্যানন ব্যবহার করে। মঙ্গোলদেরকে ফাঁদে ফেলার জন্য বাইবার্স‌ হিট-এন্ড-রান কৌশল কাজে লাগান।কিতবুকা গর্জন দিয়ে যখন মামলুকদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন এটা একটা ফাদ।পাহাড়ি এলাকায় পৌছার পর মামলুকরা আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ চালায়। ফলে মঙ্গোলরা চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পনা কাজে আসলো না।রক্তাক্ত যুদ্ধে যখন মামলুকদের বা পাশ ভেঙে গেল তখন সুলতান "ওয়া ইসলামা!ওয়া ইসলামা!বলে তাকবির দিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন ময়দানে।দ্রুত পরিবর্তন হয় যুদ্ধে ফল।১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে  আইন জালুত প্রান্ত ভরে যায় মোঙ্গলদের লাশে।সিজদায় পড়ে যান সুলতান।

বদলে যায় পৃথিবীর ইতিহাস।আইনজালুতের ঐতিহাসিক প্রান্তরে অবসান হয় মোঙ্গলদের অপরাজেয় মিথের। মুসলিমদের ক্ষমতা চলে যায় তুর্কিদের হাতে।দাস মামলুকদের হাতে রক্ষা পায় সভ্যতা।আইন জালুতের প্রান্তে যদি ফলাফল পরিবর্তন হতো, পৃথিবীর ইতিহাস অন্যরকম হতো।এই যুদ্ধে সুলতান কুতুজ হেরে গেল উত্তর আফ্রিকা, স্পেন ও ইউরোপ পরিণত হত বাগদাদ, সমরখন্দ ও বেইজিং এর মত বধ্যভুমিতে।মুসলমানদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তো।দাসের হাতে রক্ষা পায় মুসলমান।

আইন জালুত হয়েছে আরেক বদর প্রান্তার।বর্বর মোঙ্গল বাহিনীকে রুখে দেওয়ার অনন্য কীর্তির প্রতিদান হিসাবে যে বিশ্ববাসী চিরকাল সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজকে মনে রাখবে সেটা বলে দেওয়া যায় নিঃসন্দেহে।

লেখকঃ খালেদ মাসুদ, শিক্ষার্থী।