বিনা পারিশ্রমিকে দুই সহস্রাধিক কবর খননকারী লাদেন আর নেই




ফায়জুল ইসলাম শাফিন::

মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিনা পারিশ্রমিকে দুই সহস্রাধিক কবর খননকারী হাজী সফিক উদ্দিন চৌধুরী (লাদেন) মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের মৃত হাজী মোঃ মবশ্বির আলী চৌধুরীর পুত্র।

আজ বুধবার(১৯ আগষ্ট) ভোর ৬টায় সিলেটের একটি হাসপাতালে মানবতার প্রতীক "লাদেন" ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিলো ৫৫ বছর।

কবর খননকারী লাদেন প্রায় ২ সপ্তাহ যাবৎ মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। 

দাফনকাজে সর্বদা স্বেচ্ছায় প্রস্তুত থাকতেন হাজী মোঃ সফিক উদ্দিন চৌধুরী। তাঁর মধ্যে সর্বদা বিরাজমান ছিলো এক দুর্লভ মানবতা। মৌলভীবাজারের জুড়ী, বড়লেখা, কুলাউড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার লোকজনের কাছে তিনি লাদেন নামে ব্যাপক পরিচিত।

বরাবরের মত ঈদ-উল- আযহার পরের দিন দা, কোদাল, খন্তাসহ কবর খননের পুরো সরঞ্জাম নিয়ে দাফনকাজে বের হয়েছিলেন মানবিক লাদেন। ওইদিন তিনি দাফনকাজ সম্পন্ন করে, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন । এমতাবস্থায় প্রথমে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে সেখান থেকে সিলেটের একটি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে, মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালের আইসিউতে রাখা হয়। 


২০০৩ইং সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো পারিশ্রমিক ও কোনো ধরনের প্রতিদান ছাড়া'ই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ২হাজারের বেশি কবর তিনি খনন করেছেন বিভিন্ন কবরস্থানে। কখনো-কখনো দিনে ৩ থেকে ৪টি কবরও খনন করতে হয়েছে তাঁকে।

সর্বাবস্থায় পরিচিত-অপরিচিত যে কারো মৃত্যুর সংবাদ কোনভাবে পেলেই ছুটে যেতেন, সেখানে কবর খনন করে দাফনকাজসহ বিভিন্ন সহযোগীতা করতে। দূরদূরান্তে কবর খননের জন্য রয়েছিলো তাঁর একটি পিকআপ গাড়ী। আর এ গাড়ীতে থাকতো দা, কোদাল, খুন্তাসহ কবর খননের পুরো সরঞ্জাম। তাই কবর খননকারী লাদেন নামে তিনি ব্যাপক পরিচিত। 

কোনো প্রতিদান ছাড়া'ই মরণকাল পর্যন্ত সর্বদা এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন লাদেন। দাফনকাজের পাশাপাশি নিজ এলাকার রাস্তাঘাট চলাচলযোগ্য রাখতেও স্বেচ্ছায় অনেক পরিশ্রম করতেন বিভিন্ন সময়।

জুড়ীর সময়/ডেস্ক