সাগরনালে ছিল চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়, অবস্থান কোথায়?



এমদাদুল হক ::
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দিঘিরপাড় এলাকায় অক্সফোর্ড ও ক্যামব্র্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকালীন ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ ছিল বলে দীর্ঘদিন পর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল অবস্থান নিয়েই মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছে।

অনেকেই বলেন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের  জায়গাটি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দিঘিরপাড় এলাকায় অবস্থিত। এ নিয়ে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও ঘটনাস্থল থেকে তাদের জরিপ কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে। যদিও ঐতিহাসিকরা আজ অবধি কোনও সুনির্দিষ্ট জায়গার বিষয়ে একমত হননি।


“পশ্চিমভাগ তাম্রশাসন” অনুসারে, চন্দ্রপুর বিষয়া দক্ষিণে মণি-নদী (বর্তমান মনু নদী), উত্তরে কোসিয়ারা-নদি (বর্তমান কুশিয়ারা নদী), পূর্বে বৃহত্তর কৌত্তালি এবং জঙ্গাখাতকা-কাস্তন্যাখাতকা- পশ্চিমে বেত্রাঘনগনাদি।

প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ কমলাকান্ত গুপ্ত চৌধুরী তার বিখ্যাত ‘Copper plates of Sylhet’ গ্রন্থে পশ্চিমভাগ তাম্রশাসনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এবং তাম্রশাসন সর্ম্পকিত তার রচিত কিছু প্রবন্ধে জুড়ীর সাগরনালে ‘চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন। কালামাকান্ত গুপ্ত বিশ্বাস করতেন যে কৌত্তালি পূর্বের একটি বৃহত গড় বা দুর্গ এবং পশ্চিমের বেত্রাঘনগিনদী বর্তমান ঘুঙ্গি নদী এবং তিনি সর্বদা তাম্রশাসনটি পাওয়া যায় এমন মূল জায়গার প্রতি জোর দিয়েছিলেন।

যাইহোক, এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকার প্রতি ইঙ্গিত করছেন। এই ইঙ্গিতের পেছনেও কিছু যুক্তি রয়েছে। যেমন, কোনো এককালে এখানে বড় শিক্ষাঙ্গন ছিল বলে জনশ্রুতিও রয়েছে। এছাড়াও দীঘিরপাড় এলাকায় মাটির নিচে এখনো প্রাচীনকালের পয়সা, মাটির বাসন ও বাসনের ভাঙা টুকরো পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাগরনালের বাসিন্দারা বলেন, “এলাকায় জনশ্রুতি আছে প্রাচীনকালে এখানে রাজাদের বসবাস ছিল। দীঘিরপাড়ে যে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এমনটা কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। দীঘির চারদিকের পাড়কে স্থানীয় বাসিন্দারা এখন কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করেন। কবর খুঁড়তে গিয়ে বা আশপাশে কুপ খনন করতে গিয়ে মাটির নিচে প্রায়ই পুরোনো মাটির বাসন ও বাসনের ভাঙা টুকরো পাওয়া যায়।”

তারা বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অনুসন্ধান করে যদি এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নসম্পদের খোঁজ পায়, তা হলে এটি এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হবে।”


চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো সম্পর্কে যা জানা যায় তাহলো; নয়টি মঠ (একটি ব্রহ্মার মঠ, চারটি বঙ্গাল মঠ ও চারটি দেশান্তরীয়মঠ) নিয়ে চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। ব্রহ্মার মঠের যাবতীয় কার্য নির্বাহের জন্য বরাদ্দ ছিল ১২০ পাটক জমি। বাকি আটটি মঠের জন্য ২৮০ পাটক জমি বরাদ্দ ছিল। দুই ধরণের ৪ টি করে মোট ৮ টি মঠের প্রতিটি ছিল বড় বড় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল অতীব মনোরম এবং নির্মাণশৈলী কারুকার্যে সুশোভিত। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত সংস্কার ব্যয়নির্বাহের জন্য ৪৭ পাটক জমি বরাদ্দ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিল সম্পূর্ণ আবাসিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক ও অতিথিদের থাকার জন্য অতিথিশালা ছিল।

সৌজন্যঃ জুড়ীনিউজ

জুড়ীরসময়/ডেস্ক