দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল আগে জীবন বাঁচান তারপর জীবিকা



দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল আগে জীবন বাঁচান তারপর জীবিকা
এ.এস.এ আল মামুন::

দেশে প্রায় প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। সংক্রমণের শীর্ষে অবস্থানরত দেশগুলোর মধ্যে চীনকে ছাড়িয়ে এরই মধ্যে ১৭ তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। চীনে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৪ শত ৩০ জন। অন্য দিকে সংক্রমণের ১০৯ তম দিনে এসে আজ বুধবার দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হন ১ লক্ষ ২২ হাজার ৬৬০ জন আর মৃত্যু ১৫৮২ জন। সংক্রমণের হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী।

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা, দেশের সাবেক মন্ত্রী, দায়িত্ব পালনরত প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সিটি মেয়র, সচিবের স্ত্রী, চিকিৎসক, পদস্থ বেশ ক’জন সরকারি আমলা, শিক্ষকসহ সমাজের বিশিষ্টজন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। অনেকেই মারা গেছেন একেবারেই বিনা চিকিৎসায়। স্বাভাবিকভাবেই জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা ভাবছে, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র যাদের সেবায় নিয়োজিত তারাই যদি এই ভাইরাসে বাঁচতে না পারে তাহলে আমাদের কী অবস্থা হবে?

সংক্রমণের ছয় মাসেও আমরা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, যারা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেবেন সেই চিকিৎসকদেরও সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা, ভেন্টিলেশন, আইসিইউ কোনোটারই জোগান দিতে পারিনি। রোগীদের চিকিৎসাজনিত কোনো নির্দেশনা কেন্দ্রীয়ভাবে দেয়া যায়নি। এটাই হলো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘শুরু থেকেই চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিয়ে এক ধরনের অবহেলা ও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। প্রথম দিকে যেমন সুরক্ষাসামগ্রীর সঙ্কট ছিল, পরে আবার এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সুরক্ষাসামগ্রীর মান যদি ভালো না হয় তবে ব্যবহারকারীরা তো সংক্রমিত হবেই।’ নিম্নমানের, নকল পণ্য আমদানি করে পুরো জাতিকে যারা করোনার চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিলো তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। এটাই আশ্চর্যের!

দেশের করোনা পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের এক মাস পর ৮ এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৮ জন। পরের এক মাসে অর্থাৎ ৮ মে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ১৩৪ জনে। এর এক মাস পর গত ৮ জুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৫০৪ জনে পৌঁছে। দেশে করোনায় প্রথম রোগী মারা যায় ১৮ মার্চ। প্রায় দুই মাসে (৬৯তম দিনে) মৃতের সংখ্যা ৫০০ পেরোয়। এরপর মাত্র ১৬ দিনেই মৃতের সংখ্যা এক হাজার অতিক্রম করে। এই জ্যামিতিক হারে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে যথাসময়ে যথেষ্ট সংখ্যক পরীক্ষা, শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারার একটা বড় ভূমিকা আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের শীর্ষ ১৭ দেশের মধ্যে উঠে আসার পরও বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি সর্বোচ্চে অবস্থান করছে এমনটা বলা যাবে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং করোনাভাইরাস নিয়ে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এখনই শনাক্তের হার না কমাতে পারলে শীর্ষে থাকা আরো কয়েকটি দেশকে হয়তো টপকে যাবে বাংলাদেশ।

তার মতে, আক্রান্তের হার কমাতে না পারলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয় এবং সর্বশেষ ৩১ মে থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও কল-কারখানা খুলে দেয়া হয়।

এ ছাড়াও ঈদের আগে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দেশের বিভিন্ন মার্কেট-শপিংমল-বিপণিবিতানে মানুষের কেনাকাটা, গণপরিবহন চালু ও গাদাগাদি করে ঘরমুখো যাত্রার ফলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে।

এখন আবার ‘পূর্ণাঙ্গ লকডাউন’ আরোপের দাবি উঠছে। আমরা আবারো বলি, জীবিকা নয়, জীবন বাঁচানো ফরজ। আগে জীবন বাঁচান তারপর জীবিকা নিয়ে ভাবুন।

জুড়ীর সময়/ডেস্ক