এ. এম সাইফুল ইসলাম::
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সকাল ১০ টা। ছাত্র শিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে জুড়ী উপজেলা শিবির। জুড়ী নিউমার্কেট সংলগ্ন মসজিদের সামনে থেকে আমি এবং জুড়ী উপজেলা পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুমের নেতৃত্বে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবারের স্লোগানে শুরু হয় আমাদের প্রতিবাদ মিছিল।
মিছিলটি যখন বিজিবি ক্যাম্পের কাছে আসে তখন জুড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ সাজুর ড্রাইভার তার লাইটেস গাড়ি দিয়ে আমাদের মিছিলের সামনে ধাক্কা দেন। এতে হাফিজ আলম হোসাইন মারাত্মকভাবে আহত হন। সেখান থেকে আলমক্র ব্রাম্মনবাজারের মুসলিম এইড হসপিটালে পাঠানো হয়।
এরপর মিছিলটি পুনরায় নিউ মার্কেটের দিকে আসতে শুরু করে। আমরা যখন মিছিলটি নিয়ে বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করছিলাম ঠিক তখনই পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামালের নেতৃত্বে আমাদের মিছিলের সামনে এসে বাধা প্রদান করেন কিন্তু তারা দেখলেন আমাদেরকে এভাবে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না তখন একপাশে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। আমরা মিছিল নিয়ে ঠিক নিউ মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে তারা পিছন থেকে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা শুরু করেন।
এক পর্যায়ে আমরা মিছিল নিয়ে জুড়ী হাইস্কুল রোডে অবস্থান করি। তখন পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে তাদের সাথে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যুক্ত হয় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশের সাথে একযুগে আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে আমার দুই পা জখম হয় এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে আমাদের কয়েকজন ভাই আহত হন। পুলিশ সেখান থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ বদরুল ইসলাম বদই চাচাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় এবং তার উপর চালায় অমানবিক নির্যাতন।
পরে আমরা যখন এই স্হান ত্যাগ করে চলে যাই তখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে লাইটেস স্ট্যান্ডে অবস্থিত মাওলানা আব্দুল কাদিরের আদর্শ লাইব্রেরীতে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং তাঁর ছোট ভাই ফয়জুল হক স্বয়নকে আটক করে নিয়ে পুলিশের হাতে হাতে তুলে দেয়। ওই সন্ত্রাসীরা সেখানেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা বিসমিল্লাহ মাইকের সত্তাধিকারী জহিরুল ইসলামকে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসার সময় মোটরসাইকেল আটকিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়, মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং তাঁকেও পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে আমাদের আহত করলো, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করলো। এরপর তারা উল্টো আমাদের উপর দু'টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। একটি মামলা করে পুলিশ বাদী হয়ে, আরেকটি মামলা করেন জুড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ সাজু বাদী হয়ে। এই দুই মামলায় আসামি করা হয় প্রায় শতাধিক নিরীহ ছাত্র-জনতাকে।
ওই দিন রাত থেকেই শুরু হয় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাদেরকে পায়নি তাদের পরিবারের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে পুলিশ। রাতে জুড়ী উপজেলা জামায়াতের নেতা লুৎফুর রহমান আজাদীকে গ্রেপ্তার করে।
সেদিনকার পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যৌথ হামলায় আহত হই আমি, হাফিজ আলম হোসাইন, জিয়া উদ্দিনসহ অনেকেই। পরে ওই দুই মামলায় কারবরন করি আমিসহ আমাদের অনেক ভাই।
যুবলীগের সভাপতি মামুনুর রশিদ সাজুর মামলায় ২০২১ সালে সবাই খালাস পেলেও পুলিশের করা মামলা এখনো চলমান। আমি এবং আমরা বিশ্বাস করি হাজারো শহীদের রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশে সকল নিপীড়নমূলক মামলা প্রত্যাহার হবে এবং সকল জুলুমের বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।
সাবেক সভাপতি, ইসলামি ছাত্রশিবির জুড়ী উপজেলা।
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/সাইফ