আমির হোসেন::
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলন থেকে শুরু হওয়া ১ দফা ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন। ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ৫ জুলাই শেখ হাসিনা পদত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়।
ছাত্রদের কোঠা সংস্কারের আন্দোলন ছিল যৌক্তিক একটি দাবি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য যৌক্তিক আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে এক পর্যায়ে সকল ছাত্রদের কে রাজাকার আখ্যায়িত করার পর সমগ্র বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে রাজপথে নেমে পরে।
আন্দোলন আরও বেশি গতিশীল হয়ে পরে, যখন আন্দোলনকে চুরমার করার জন্য শেখ হাসিনার পালিত পুলিশ বাহিনী দিয়ে ছাত্রদের উপর অন্যায় ভাবে নির্মম গণহত্যা চালায়। নির্বিচারে একের পর এক ছাত্রদের হত্যা করে আন্দোলনকে ঠেকানোর জন্য নানা ধরনের চেষ্টা করে। ছাত্ররা পিছু না হেঁটে আন্দোলন চালিয়ে যায়, এক পর্যায়ে আন্দোলন সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ এই গণহত্যা মেনে নিতে পারেনি।
অন্যায় ভাবে গণহত্যা দেখে আমি একজন ছাত্র হিসেবে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। স্থানীয় পর্যায়ে আগ্রহী ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাই। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে প্রথম দিকে পিছনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে তাকি।
সাধারণ ছাত্ররা যখন আন্দোলনে নেমেপড়ে, টিক তখনি আওয়ামী লীগ এর লাঠিয়াল বাহিনী ও তাদের পালিত পুলিশ বাহিনী অন্যায়ভাবে নির্যাতন করতে তাকে।
একটা পর্যায়ে আমি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার ফলে ফ্যাসিস্টরা আমাকে ট্যাগ দেয় ছাত্রদলের আমির হোসেন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এসব বলে আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে দোসররা। পুলিশের অভিযানে বাড়িতে থাকতে পারিনি ৩ তারিখ রাত। দিনে জুড়ীতে মিছিল দিয়ে রাতে বাড়িতে আসি এসময় খেতে বসলে পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালায়। আমি বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে ওইদিনের জন্য কোনোরকম পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাই।
পরে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিবারের সদস্যরা নিষেধ করেন আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি, আমি এবং আমার সহপাঠীরা ছাত্রজনতার উপর একের পর এক গণহত্যার তান্ডব দেখে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে সতর্কতা ও নানা কৌশল অবলম্বন করি। এই আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষের নিজ নিজ জায়গা থেকে অংশ গ্রহণ করে।
সবাই সবার মতো করে পরিকল্পনা করে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সকলকে একত্রিত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাই। আমাদের চিন্তা চেতনা কেবল মাত্র স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছিল বলে সকল রাজনৈতিক দল ও ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই আমরা বিপ্লব করতে পেরেছি। এই আন্দোলন কোন একক ব্যক্তির নেতৃত্ব হয়নি। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই হয়েছে। তাই এই আন্দোলনের সকল ক্রেডিট সাধারণ ছাত্রদেরসহ সকলের।
তাছাড়া গণমাধ্যম সঠিক তথ্য প্রকাশ করেছে বলেই আমাদের বিপ্লব ঘটাতে অনেকটা সহজ হয়েছে। জুলাই বিপ্লব থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সকল ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করতে পরবো।
লেখক: জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন