বিনা প্রতিদ্ব‌ন্দিতার মৌলভীবাজা‌র বিজয়; পড়ুন আপনার প্রভুর নামে

বিনা প্রতিদ্ব‌ন্দিতার মৌলভীবাজা‌র বিজয়;পড়ুন আপনার প্রভুর নামে

মুনজের আহমদ চৌধুরী::

বাংলা‌দে‌শে আ‌মিই আম‌ার শেষ প্রজন্ম। আমার ভাই ‌বোন বা সন্তান;কেউই হ‌লি‌ডে ছাড়া দে‌শে যা‌বে না। স্ত্রী সন্তান রে‌খে জরুরী কাজ ছাড়া আমারও কখ‌নো টানা ক‌য়েকমাস দে‌শে থাক‌ার সু‌যোগ নেই। 

কিন্তু,জন্মমা‌টি মৌলভীবাজার‌কে বড় ভালবা‌সি। দেশটা‌কে ভা‌লব‌া‌সি। গতকাল লন্ড‌নের মেয়র সহ তিন‌টি প‌দের নির্বাচ‌নে ভোট দি‌য়ে এলাম।

বাংলাদে‌শের যে জি‌নিসটা এখন সব‌চে‌য়ে বে‌শি কষ্ট দেয়,সে‌টি হ‌লো মানু‌ষের ভো‌টের অ‌ধিকার এ‌কেবা‌রে হা‌রি‌য়ে যাওয়াটা। স্কু‌লের সভাপ‌তিমন্ডলী থে‌কে উ‌কিল,ডাক্তার, সাংবা‌দিক‌দের সংগঠন;সবখা‌নে এখন ভোট কারচু‌পির প্রাম‌ান‌্য অ‌ভিযোগ প্রমান ক‌রে দে‌শে নব্বই‌য়ের দশকে র‌ক্তের দা‌মে প্রতি‌ষ্ঠিত নির্বাচনী গনতান্ত্রিক ব‌্যবস্থার নিঃ‌শেষ হ‌য়ে যা‌চ্ছে।

এমপি থে‌কে উপ‌জেলা চেয়া‌রম‌্যান সবাই প্রায় দশ প‌নে‌রো বছর ধ‌রে বিনা প্রতিদ্ব‌ন্দিতায় নির্বাচিত। এমন‌কি সরকারী দ‌লের অন‌্য এ‌কজন প্রার্থী দাড়া‌ঁলেও লুপ‌হোল দিয়ে ক্ষমতা-অর্থবানরা তাকে নির্বাচন ক‌মিশন দি‌য়ে সি‌ষ্টেম ক‌রে ব‌সি‌য়ে দেন। 

মৌলভীবাজার সদর উপ‌জেল‌ার কথাই ব‌লি। ওয়ান ই‌লে‌ভে‌নের পর এ উপ‌জেলায় একবার শুধু মানুষ উপ‌জেলা চে‌য়ারম‌্যান প‌দে মিজানুর রহমান‌কে নির্বা‌চিত কর‌তে পে‌রে‌ছিল। এম‌পি-মেয়র-উপ‌জেলা-জেলা প‌রিষদ প্রায় সব নির্বাচ‌নেই সি‌ষ্টে‌মে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় একজন প্রার্থীই বিনা ভো‌টে অ‌তি সন্মা‌নে নির্বা‌চিত হচ্ছেন। গত সংসদ নির্বা‌চ‌নে নৌকা প্রতী‌কের প্রার্থীর বিরু‌দ্ধে বি‌দ্রোহী প্রার্থী হ‌তে চে‌য়ে‌ছিলেন এম এ‌ রহিম সিআই‌পি না‌মের একজন প্রবাসী উ‌দ্যোক্তা। এর আ‌গে তি‌নি দুবার জেলা প‌রিষদ চেয়া‌রম‌্যান প‌দে নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্ব‌ন্দিতা ক‌রে আ‌জিজুর রহমা‌নের ম‌তো হে‌ভিও‌য়েট ও জেলার প্রব‌ীনতম রাজ‌নৈ‌তিক নেতার কাছে অল্প ভো‌টে হে‌রে‌ যান। কিভা‌বে তি‌নি এত ভোট পে‌য়ে‌ছিলেন সেটি অবশ‌্য ভিন্ন আ‌লোচনা। যা‌হোক, জেলা প‌রিষ‌দে তার নির্বাচন কর‌াতে কোন আইনী বাধাঁ খু‌ঁ‌জে পায় নি নির্বাচন ক‌মিশন। কিন্তু, একই ব‌্যক্তি গত সংসদ নির্বাচ‌নে প্রার্থী হ‌লে তার প্রার্থীতা বা‌তিল ক‌রে দেয় নির্বাচন ক‌মিশন। আইন থাক‌লে আই‌নের ফাঁক-ফোকর থাক‌বেই। ‌সেই ফাঁক দি‌য়ে ভো‌টের প্রতিপক্ষ‌কে পেছ‌নের দ‌রোজার দি‌য়ে দৌ‌ড়ে পরা‌জিত করাটা যে‌কোন সু-পুরুষ রাজনী‌তি‌বি‌দের বাহ্যিক ই‌মেজের জন‌্য অসুন্দর।

সাম‌নে উপ‌জেল‌া নির্বাচন। সদর উপ‌জেলায় চেয়া‌রম‌্যান প‌দে গতবার আর কোন প্রার্থী না থাকার সি‌ষ্টে‌মে নির্বা‌চিত কামাল হো‌সেনের সা‌থে এবার প্রার্থী হ‌য়ে‌ছি‌লেন শহর স‌ন্নিক‌টের মোস্তফাপুর ইউনিয়‌নের দুইবা‌রের তুমুল প্রতিদ্ব‌ন্দিতাপুর্ন নির্বাচ‌নে জয়ী হওয়া তুমুল ত‌র্কিত তাজুল ইসলাম।

এই তাজুল ইসলাম ও কামাল হো‌সে‌নের ম‌ধ্যে কে নন্দরানী চা বাগান দখল নি‌য়ে বাগা‌নের ‌জেনা‌রেল ম‌্যা‌নেজার‌কে প্রকা‌শ্যে গু‌লি হত‌্যার ঠিকাদার ,শেরপুর ই‌পি‌জে‌ডে ভুয়া বি‌ক্রেতা বা‌নি‌য়ে অ‌ন্যের জ‌মি বিক্রির চক্রের রাজনী‌তি‌জী‌বি প্রশ্রয়দাতা,কার বিরু‌দ্ধে জেলা জু‌ড়ে কর্জ ব‌্যবসার না‌মে চাদাঁব‌া‌জি,সা‌লিশ ব‌্যবসার অ‌ভি‌যোগ, আর কার বিরু‌দ্ধে ভো‌টের আ‌গে হজ ক‌রে সং‌শোধন হব‌ার কথা দি‌য়ে নি‌জের এলাকার মানু‌ষের ভালবাসায় দুইবার চেয়ারম‌্যান হবার পরও ৫০ বছর বয়‌সে এ‌সেও পাঁড় মাতাল,অ-সংলগ্ন আচরন, লাম্পট‌্য,এলাকায় কাংখিত উন্নয়নে অম‌নো‌যোগীতার অ‌ভি‌যোগ;তা নি‌য়ে খুব সঙ্গতভ‌া‌বেই আ‌লোচনা পর্যা‌লোচনা কর‌বেন ভোটারররা। কে মাষ্টার্স পাশ, আর কে স্ব‌শি‌ক্ষিত তা নি‌য়ে ভে‌াটার‌দের বি‌শ্লেষ‌নের অ‌ধিকা‌রের নামই ভোটাধিকার।

সদর উপ‌জেলার সর্বশেষ ভো‌টে নির্বা‌চিত চেয়ারম‌্যান,জেলা বিএন‌পির বর্তমান সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এবা‌রো তার দ‌লের নি‌র্দেশনা মে‌নে নির্বাচন ক‌রেন‌নি। সদর উপ‌জেলার দুইবা‌রের ভাইস চেয়ারম‌্যান আলাউর রহমান টিপুর এবার চেয়ারম‌্যান প‌দে নির্বাচন কর‌লে প‌রিচ্ছন্ন প্রার্থী হি‌সে‌বে জি‌তে আসার সম‌ুহ সম্ভাবনা থাক‌লেও ‌শেষ মুহুর্তে তি‌নি ব‌্যক্তিগত কারন দেখি‌য়ে প্রার্থী হন‌ নি।

বহু বছর পর কামাল-তা‌জের ম‌তোন আওয়ামীলী‌গের দু‌টি বল‌য়ের দু‌টি প্রজ‌ন্মের দুজন ক‌ব্জির জো‌রে শ‌ক্তিমান প্রার্থীর,একসম‌য়ের গুরু-শিষ‌্য, পরবর্তী‌তে দীর্ঘদি‌নের স্ব-দলীয় রাজ‌নৈ‌তিক প্রতিপ‌ক্ষের মধ‌্যকার সুন্দর ও ই‌তিবাচক এক‌টি নির্বাচনী লড়াই দেখার আশা ক‌রে‌ছি‌লেন সদর উপ‌জেলার প্রায় চার লাখ মানুষ ও এ জনপ‌দের প্রায় লাখখ‌া‌নেক প্রব‌াসী। কিন্তু, তাজুল ইসলাম তা‌জের অন্তত প‌নে‌রো বছ‌রের পুর‌নো মামলার কারন দেখি‌য়ে তার ম‌নোনয়ন বা‌তিল ক‌রে‌ছে স্থানীয় জেলা নির্বাচন অ‌ফিস। আর ক‌োন প্রার্থী না থাকায় কামাল হো‌সেন দ্বিতীয়বা‌রের ম‌তোন বিজয়ী হ‌য়ে‌ছেন ব‌লে উল্লাস কর‌ছেন তার সমর্থকরা। উত্ত‌রে,তাজ বল‌ছেন-তি‌নি উচ্চ আদাল‌তে যা‌বেন।

প্রার্থী‌দের কা‌ছে স‌বিনীত অনু‌রোধ;সাহস থাক‌লে সুষ্ট নির্বাচ‌নে প্রতিদ্বন্দীতা করুন। ভো‌টের প‌রি‌বেশ সৃ‌ষ্টি প্রার্থীর দা‌য়িত্ব। ভো‌টে জি‌তে নি‌জের যোগ‌্যতা প্রমান করুন। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর পুর‌নো মামলার ফাই‌লে জায়গামত খরচ বা সি‌ষ্টেম ক‌রে হয়‌তো বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় চেয়ার পাওয়া য‌ায়;কিন্তু ‌সে চেয়া‌রে জোর ক‌রে বসে ভোটার‌দের হৃদ‌য়ের সন্মা‌ন অর্জন করা যায় না। নিজ নির্বাচনী এলাকায় এ‌কেবা‌রে অ‌চেনা আগন্তক মোকাব্বির খানরা বিনা ভো‌টে এমপি হ‌লে তাতে খু্ব একটা কিছু সাধারন মানু‌ষের কিছু আ‌সে-যায় না। কিন্তু কামা‌ল হো‌সে‌নের ম‌তোন জেলা পর্যা‌য়ে দীর্ঘদিন রাজ‌নৈ‌তিক নেতৃত্ব দেয়া ক‌্যারিশমা‌টিক নেতা‌র বার বার বিনা-প্রতিদ্ব‌ন্দিতায় নির্বাচিত হবার সু‌যো‌গের সু‌নিপুন ব‌্যবহৃত কাগজ হা‌তে ফেসবু‌কের ছ‌বি; তাঁর দাপু‌টে ব‌্যক্তি‌ত্বের সা‌থে বড্ড সামঞ্জস্যহীন।

আ‌মি জা‌নি, দুর্বৃত্তে আর দুর্বৃত্তায়‌নে আকন্ঠ সম‌য়ে সমা‌জের সব‌চে‌য়ে ভাল মানুষ জন‌প্রতি‌নি‌ধি নির্বাচিত হ‌য়ে আস‌তে পার‌বেন না। কিন্তুু যার‌া নির্বাচনে প্রতিদ্ব‌ন্দিতা কর‌তে চান,অন্তত তা‌দের প্রতিদ্ব‌ন্দিতা কর‌তে দেয়া হোক। অন্তত একদম স্থানীয় পর্যা‌য়ের নির্বাচনেও য‌দি এরকম উলঙ্গ সি‌ষ্টেম হয়,তাহ‌লে স‌চেতন ভোটাররা বড় অসন্মা‌নিত বোধ ক‌রেন। অন্তত পাচঁ বছর প‌রে হ‌লেও যেন প্রার্থীরা সাধারন মানুষ,ভোটার‌দের কা‌ছে একবা‌রের জন‌্য হ‌লেও যান। সাধারন মানু‌ষের কথা শোনার,অতী‌তের কৃতক‌র্মের জন‌্য মাফ চাওয়ার অন্তত ক্ষ‌নি‌কের অ‌ভিনয়টুকু যেন নির্বাচ‌নের প্রার্থীদের করার সু‌যোগ থাকে। 

মৌ‌লভীবাজার সদর উপ‌জেলার যে দুজন প্রার্থী তা‌দের কা‌রো সা‌থেই গত অন্তত ১৬ বছ‌রে ফো‌নেও কোন‌দিন কথা হয় নি। ২০০৯ সা‌লে মৌলভীবাজার পাব‌লিক লাই‌ব্রেরীর শতব‌র্ষের ই‌তিহা‌সের প্রথম ও একমাত্র নির্বাচ‌নে সর্বক‌নিষ্ট‌ প্রার্থী হি‌সে‌বে প্রতিদ্ব‌ন্দিতা ক‌রে সর্বচ্চো ভোটে যখন নির্বা‌চিত হই-তখ‌নো এ দুজ‌নের একজন আমার সন্মানিত ভোটার ছি‌লেন। ‌কিন্তু, আ‌মি তার কা‌ছে ভোট চাই‌তে যাই নি। আমার ফেসবু‌কের বন্ধু তা‌লিকাতেও তারা নাই। 

এবার য‌দি শেষ পর্যন্ত ভোট হয়,কোন কেন্দ্র দখল না হয়,অবাধ-ভোটার উপ‌স্থি‌তিময়, প্রশাস‌নের পক্ষপাত‌বিহীন ঐ নির্বাচ‌নে সদর উপ‌জেলায় যি‌নি জি‌তে আস‌বেন,তাঁ‌কে আ‌মি নি‌জে বাড়ী‌তে গি‌য়ে অ‌ভিনন্দন জানা‌বো।

জনরা‌রায়ে নির্বা‌চিত জনপ্রতি‌নি‌ধিদের আ‌মি ভালবা‌সি, তাদের সন্মান জানাতে ভাল লাগে।

লেখক: প্রকাশক, ডেইলি ডাজলিং ডন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাব।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন