জুড়ীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে পদত্যাগ করলেন মাহবুব আলম জলিল

জুড়ীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে পদত্যাগ করলেন মাহবুব আলম জলিল

বিশেষ প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন মাহবুব আলম জলিল। 

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজের আপন ছোট ভাইকে রাজনৈতিক হয়রানি, ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত অভিযোগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডিতে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে! এই শিরোনামে একটি বার্তা দিয়ে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। মাহবুব আলম জলিল ফেসবুক পোস্টটি জুড়ীরসময় পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

অত্যান্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক নাশকতার মামলায় আটক আমার ছোট ভাই হাবিবুর রহমান এর কারাবাস প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। 

হাবিবুর রহমান জুড়ী ভবানীগঞ্জ বাজারের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। প্রায় ২৫ বছর ধরে সে সুনামের সঙ্গে  ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সে জুড়ী উপজেলায় একজন পরিচিত মুখও বটে। ব্যবসায়ী পরিচিতির  পাশাপাশি সে আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থা Apex জুড়ী ভ্যালির বর্তমান প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও হাবিবুর রহমান সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছেন। 

ফেসবুক বার্তায় বলেন, হাবিবুর রহমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত এমন কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেনা। বিএনপির রাজনীতির সাথে একসময় জড়িত থাকলেও বিগত দশ বছর ধরে সে ওই দলের পক্ষে রাজপথের কোনো মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ থেকে দুরে রয়েছে। তারপরও বিগত ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার ৪টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের মিথ্যা মামলায় তাঁকে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।সে সময় বিনাদোষে তিনমাস কারাভোগ করে জামিনে বেড়িয়ে আসেন। পরবর্তীতে তাঁর বিরুদ্ধে আরও ৩টি নাশকতার মামলা করা হয়। 

ফেসবুক বার্তায় মাহবুব আলম বলেন, অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় কথিত এমন আরেকটি নাশকতার মামলা তাঁর বিরুদ্ধে করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে। সেই মামলায় হাবিবুর রহমানকে ১৬ নম্বর আসামি করা হয়। সেই মামলার সুত্রধরে হাবিবুর রহমানের খুঁজে পুলিশ গত ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি  আমাদের বাড়ীতে আসেন। তখন তাঁকে বাড়ীতে না পেয়ে তাঁর দোকানেও আসেন। তাঁকে না পেয়ে বাড়িতে  বলে আসেন কোর্টে আত্মসমর্পণ করার জন্য। পুলিশের নির্দেশ মোতাবেক গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার কোর্টে গিয়ে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় আদালত তাঁর জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছেন। 

মাহবুব আলম ফেসবুক বার্তায় আরও বলেন, আমার ছোট ভাই হাবিবুর রহমান যে নির্দোষ তার প্রতিকার চেয়ে আমি বারবার রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু কেউই আমাকে পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা করেননি। আমার ছোট ভাইয়ের প্রতি বারবার এমন অন্যায় আচরণ দেখে আমি বিস্মিত হচ্ছি!  সরকারবিরোধী কোনো কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত না হয়েও সে কেন বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন?

কাদের ইশারায় একজন নিরপরাধ ব্যক্তির উপর জুলুম করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই মিলাতে পারছিনা। 

ফেসবুক বার্তায় তিনি বলেন, যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাশকতার মামলায় আমার ছোট ভাইকে আসামী বানিয়ে আমার বৃদ্ধ মায়ের চোখের পানি জড়িয়েছেন, অবুঝ তিনটি সন্তানকে বাবার স্নেহ- আদর থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন, তাঁকে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়েছেন,পরিবারের সবাইকে মানসিক যন্ত্রণার মাঝে রেখেছেন, তাঁদের পরিচয় আমি না জানলেও সৃষ্টিকর্তা মহান রব ঠিকই জানেন। আল্লাহ তাঁদের বিচার দুনিয়ায় ও আখেরাতে করবেন। কারণ মজলুমের দোয়া কখনও বিফল হয়না।

এক পর্যায়ে আবেগঘন একটি বার্তা ফেসবুকে দিয়ে মাহবুব আলম বলেন, আমার সর্বশেষ কথা হলো, আমার ছোট ভাই হাবিবুর রহমান বিনা দোষে জেল খাটবে, আর আমি দলের বড় পদে থেকে রাজনীতি মাঠে সরব থাকবো! এটা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর অবস্থা হবে। তাই আমি মাহবুব আলম জলিল জুড়ী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম। যেদিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্টিত হবে, সেদিনই রাজনীতিতে ফিরবো। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে চলার পথে কারো সঙ্গে ভুল করে থাকলে আমাকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ সবার সহায় হোন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে পদত্যাগকারী মাহবুব আলম জলিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পদত্যাগের বিষয়টি জুড়ীরসময়কে নিশ্চিত করেন।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন