মাল্টায় স্বপ্ন দেখছেন জুড়ীর চাষিরা

মাল্টায় স্বপ্ন দেখছেন জুড়ীর চাষিরা- Jurirsomoy


খোর্শেদ আলম::
সবুজ কমলার জন্য বিখ্যাত জুড়ীতে দিন দিন বাড়ছে মাল্টা চাষ। গড়ে উঠছে একাধিক মাল্টা বাগান। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠছে নতুন নতুন মাল্টা বাগান। তেমনি একটি বাগান গড়ে তুলেছেন জুড়ী উপজেলার মো: খালেদ উদ্দিন। তার বাগানে প্রায় ১২শত মাল্টা গাছ রয়েছে। দুই বছর আগে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সাড়ে ৩ একর জায়গার উপর এই বাগান গড়ে তুলেছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও খেতে অত্যন্ত সু-স্বাদু ও মিষ্টি। বারি-১ জাতের এই মাল্টার উৎপাদন বাড়ছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে। সম্ভাবনাময় এই ফসল চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ কম থাকায় সহজে ফলন হয়। সে জন্য কৃষকরা ঝুঁকছেন এখন মাল্টা চাষে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জুড়ী উপজেলায় ২১ হেক্টর জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। গত বছর যা ছিল ১৮ হেক্টর। উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে কম বেশি হচ্ছে মাল্টার আবাদ। রয়েছে ছোট বড় শতাধিক বাগান। জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী, ফুলতলা, সাগরনাল ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে এর ফলন হচ্ছে বেশি। কেউ করেছেন সখের বসে চাঁষাবাদ আবার কেউ কেউ বাণিজ্যিক চিন্তাধারা নিয়ে। এবছর জুড়ীতে মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৮৬ টন।
সরজমিনে পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বড় বড় দুটি পাহাড়ে প্রায় ১২ শতাধিক মাল্টার গাছ দিয়ে তৈরি করেছেন বিশাল বাগান। মাত্র ২ বছর পূর্বে প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন মো: খালেদ উদ্দিন। গাছ রোপণের পরের বছর থেকে ফল পাওয়া শুরু হয়। এরপর চলতি বছর তিনি এই বাগান থেকে মাল্টা পাচ্ছেন। মাল্টার পাশাপাশি তার একই টিলা ভূমিতে রয়েছে কমলা ও জারালেবু। এবং পাশের জমিতে রয়েছে মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি ও গরু ছাগলের খামার। বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলেও সৌখিন ব্যক্তির এই প্রকল্পের সর্বমোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। কিছুটা সরকারি হলেও বাকি সম্পূর্ণ করেছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে।

গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের ডোমাবাড়ী গ্রামের সফিক উদ্দিন জানান, সরকারি ভাবে জুড়ী উপজেলা থেকে ১০ শতাংশ যায়গায় ৩০ টি গাছের একটি প্রদর্শনী পেয়েছেন। গাছের বয়স এখন তিন বছর হয়েছে। এই বছর প্রতিটি গাছে প্রায় ২০ থেকে ৬০ টি করে ফল এসেছে। ছোট ছোট গাছের ফল দেখে অনেকের উৎসাহ বেড়েছে মাল্টার প্রতি। কেউ কেউ উদ্যোগ নিয়েছেন আগামীতে মাল্টা চাষে মনযোগ দিবেন।

তিনি বলেন, কৃষি দপ্তর প্রকৃত কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে সহায়তা করলে মাল্টা চাষে সম্ভাবনা রয়েছে।

জুড়ীর বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় মাল্টা বাগানের মালিক মো: খালেদ উদ্দিন বলেন, পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুরঞ্জিত ধর রনি এর পরামর্শে আমি মাল্টা বাগান শুরু করি। সরকার থেকে সার সহ সকল ধরণের সহযোগীতা পেয়েছি। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত বাগান দেখেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এবছর মাল্টার ফলন ভালো হয়েছে। গাছ ছোট থাকায় ভারসাম্য রক্ষার জন্য কিছু গাছের মাল্টা আমরা গাছ থেকে ছাটাই করেছি কৃষি অফিসারের পরামের্শ। আশাকরি আগামী বছর আমাদের মাল্টার বাম্পার ফলন হবে।

তিনি বলেন, আমাদের বাগানে সরকার থেকে প্রদর্শনীসহ নিজ খরছে ১২০০শত মাল্টা গাছ, ৪শত কমলা গাছ সহ লেবু জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গার উপর আমাদের মাল্টা বাগান। প্রতিনিয়ত ২জন লোক আমাদের বাগানে কাজ করে। এখন পর্যন্ত এই বাগানে আমাদের খরচ হয়েছে ১৩ লক্ষ টাকার মতো।

পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের উপ-সহকারী  কৃষি কর্মকর্তা সুরঞ্জিত ধর রনি বলেন, জুড়ী উপজেলায় মাল্টা একটি সম্ভাবনাময়  ফসল। সারা বাংলাদেশে জুড়ীর কমলার যেমন সুনাম রয়েছে, আমি আশাবাদী  আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে বারি মাল্টা-১ জাতের ফলটি বাজার দখল করে নেবে। আমরা লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি  প্রকল্প এর মাধ্যমে পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে ছোট বড় বাগান মিলে প্রায় ১০ হেক্টর  মাল্টা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বাগানে মাল্টা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এবছর কয়েকটি বাগান মিলে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে। যেহেতু বাগান গুলোর বয়স কম এজন্য পরিচর্যা  করতে হবে  নিয়মিত এবং বছরে কমপক্ষে ২ বার সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। শুকনা  মৌসুমে সেচ দিতে হবে তাহলে বাগান গুলো অনেক দিন টিকে থাকবে।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো: মাহমুদুল আলম খান বলেন, লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। শুকনো মৌসুমে মাল্টার উৎপাদন বাড়াতে গাছের পরিচর্চায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। এই প্রযুক্তিতে পানি ও সার একসাথে দেওয়া যাবে ড্রিপ ইরিগেশনের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, যারা মাল্টা চাষ করেছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে মো: খালেদ উদ্দিনের মাল্টা বাগান জুড়ীর সবচেয়ে বড় বাগান। এই বাগানের পরিধি আরও বাড়বে। এবছর বাগানে ভালো মাল্টা এসেছে।

জুড়ীরসময়/কেআ/সাইফ