বিশ বছর পর এমবিবিএস পাশ করলেন আব্দুল করিম জামাল

বিশ বছর পর এমবিবিএস পাশ করলেন  আব্দুল করিম জামাল


নিজস্ব প্রতিবেদক::

ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে১৯৯৪ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান জামাল। ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক হয়ে গরিব দুঃখীর সেবা করবেন। ‌কিন্ত ২০০১ সালে এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার আগে তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায় । দিতে পারেননি ফাইনাল পরীক্ষা। তবে দীর্ঘ চিকিৎসার পর নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আর মানসিক রোগকে জয় করে ২০২২ সালে প্রায় ২০ বছর পর এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেন‌ মেধাবী আর অদম্য জামাল। ‌


মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কামিনীগঞ্জ বাজারের বাসিন্দা শিক্ষক আব্দুল মতিনের ছেলে আব্দুল করিম জামাল। আব্দুল মতিন জীবদ্দশায়

উপজেলা সদরের জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন । জামাল সেই বিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করে ঢাকা তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হন।‌ 


জামাল জানান, চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছিলেন তিনি  জটিল মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত।‌ এ রোগে মানুষের চিন্তাধারা এবং অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না । চিকিৎসার সময় দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে মেডিকেল কলেজ তাঁর ভর্তি বাতিল করে দেয়। সুস্থ হওয়ার পর তিনি  ভর্তির জন্য মেডিকেল কলেজে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে নিজের আগ্রহের কথা জানান ।‌ পরে নানা‌ দপ্তরে যোগাযোগ করে ছাত্রত্ব ফেরত পেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পজিটিভ সিদ্ধান্ত নিলে ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি এমবিবিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেন। যার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত ৪ মার্চ।


এক প্রতিক্রিয়ায় আবদুল করিম জামাল বলেন, আল্লাহর শুকরিয়া আমি ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছি। দীর্ঘ বিরতির পর লেখাপড়া করে পরীক্ষা দেওয়া সহজ ছিল না। তবে মানুষ চাইলে সবকিছুই সম্ভব।  জীবনের কঠিন সময়গুলোতে যারা তাকে সাহস যুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন - তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ‌ চিকিৎসক হিসেবে আজীবন গরিব দুঃখী মানুষের সেবা করে যেতে চান তিনি।  জামালের মা বাবা এখন আর বেঁচে নেই। সাত ভাই ও চার বোনের একজন জামাল। ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী ও চার বছরের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে তাঁর। 


জামালের এই সাফল্যের কথা শুনে জুড়ীর কৃতি সন্তান, বাংলাদেশের বিশিষ্ট কিডনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আব্দুল মনাফ বলেন, জামাল অনেক কঠিন কাজ করেছেন । অদম্য ইচ্ছা আর প্রচন্ড মানসিক শক্তি না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।‌ আমি তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই আর তাঁর সফলতা কামনা করি।


জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন