হাকালুকি হাওরে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার

হাকালুকি হাওরে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে চলছে মাছ শিকার


মো. শাহ আলম সুমন::

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে অবাধে বেড়জাল ও নিষিদ্ধ জাল দিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে মাছ শিকারের মহোৎসব। এর কারণে হুমকিতে রয়েছে হাওরের মৎস্য সম্পদ ও জলজ উদ্ভিদ।

জানা যায়, দুই যুগ আগেও হাকালুকি হাওরে ১১০ প্রজাতির দেশীয় মাছ ছিলো। যা এখন পঞ্চাশ প্রজাতির নিচে নেমে গেছে। হাওর থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মরায়েক, গাঙ মাগুর, রিটা, নানিদ, বাঘা আইড়, চিতল, রাণী মাছ, এলংসহ কয়েক প্রজাতি সুস্বাদু মাছ। এছাড়াও হাওরের মাখনা, পদ্ম, সিঙরা, শাপলা, বনতুলসী, নলখাগড়া, হেলেঞ্চা, বল্লুয়া, চাল্লিয়াসহ শতাধিক প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ছিলো। এসব উদ্ভিদ এখন বিলুপ্তপ্রায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও হাওরের প্রতিবেশ নিয়ে কার্যক্রম চালানো সংস্থার সূত্রে জানা যায়, বর্ষাকালে প্রতিদিন বেড়জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দলবদ্ধভাবে জেলেরা বড় নৌকাযুগে নিয়ে মাছ শিকার করেন। আগে বেড়জালের দৈর্ঘ ১ থেকে দেড়হাজার ফুট ছিলো আর ব্যাস (জালের ছিদ্র)বড় ছিলো । এখন জেলেদের ব্যবহৃত জালের দৈর্ঘ ৩ থেকে ৪ হাজার ফুট এবং ব্যাস ছোট। যার কারণে বড় মাছের সাথে পোনামাছও ধরা পড়ে এসব জালে। এসব জালে হাওরের জলজ উদ্ভিদগুলো পরিপুর্ণ হওয়া আগেই নষ্ট হয়ে যায়।

হাওর তীরের কুলাউড়ার সাদিপুর, জুড়ী অংশের শাহপুর, বেলাগাঁও গ্রামে তিন হাজার মৎস্যজীবি পরিবারের বসবাস। হাওর থেকে মাছ শিকার করে এসব মৎস্যজীবিরা জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্ষাকালে হাওরজুড়ে পানি থাকে ৪ থেকে ৫ মাস।

এসময় জেলেরা বড় বেড়জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে হাওরের নাগুয়া, ফুটবিল, চকিয়া বিল, চাতলাবিল, কাংলি, গোবকুড়ি বিলসহ অর্ধশতাধিক বিল এলাকায় মাছ শিকার করেন।

জুড়ী উপজেলার স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, হাওর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন। নানা দূষণে হাওরের জীব বৈচিত্র হুমকিতে। বর্ষাকালে হাকালুকিতে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজননকালেও অবাধে মাছ শিকার হয়। এতে মা মাছ ও পোনামাছ ধরা পড়ায় মৎস্য সম্পদ হুমকিতে। হাওরের জলজ উদ্ভিদগুলো প্রাণ হারাচ্ছে। হাওরের প্রতিবেশ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।

ইউএসএইডের সহায়তায় সিএনআরএস এর আওতায় হাকালুকির প্রতিবেশ প্রকল্পের সাইট কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, বর্তমানে কয়েকবছর ধরে জেলেরা যেসব বেড়জাল ব্যবহার করেন এসব জালের ছিদ্র খুব ছোট। এছাড়াও কারেণ্ট জাল, নেট জাল দিয়ে মাছ ধরেন। হাওরে ১৫ বছর আগেও হাওরে ২৫টিরও বেশি অভয়াশ্রম ছিলো। বর্তমানে অভয়াশ্রমের সংখ্যা মাত্র ১১টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটিতে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে। অবাধে বেড়জাল ব্যবহারে হাওরের জলজ উদ্ভিদ বিনষ্ট হচ্ছে। এতে মাছের খাবার সংকটও দেখা দিচ্ছে। ইতিমধ্যে হাওরের সুস্বাদু দেশীয় বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, প্রতি সপ্তাহে তিনদিন পর পর হাকালুকির কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা অংশে অভিযান চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বড়লেখা অংশে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বেড়জাল জব্দ করে পুড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হাওরে মাছ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাকালুকি তীরের মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জুড়ীরসময়/সুমন/সাইফুল্লাহ