জুড়ীতে মহাবিপন্ন পাহাড়ী হলুদ কচ্ছপ উদ্ধার, বনে অবমুক্ত

জুড়ীতে মহাবিপন্ন পাহাড়ী হলুদ কচ্ছপ উদ্ধার, বনে অবমুক্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ডোমাবাড়ী এলাকায় মঙ্গলবার মহাবিপন্ন প্রজাতির একটি হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা প্রাণীটি হলুদ পাহাড়ী কচ্ছপ বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। এটির সারা দেহ হলুদ মাঝে মাঝে ফুটবল আকৃতির রুপ।
মঙ্গলবার রাতে দেখা শুনা করার জন্য পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম কচ্ছপটি তার নিজের হেফাজতে রাখেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এটি লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদি সারওয়ার ও বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজি চয়ন সেটি লাঠিটিলা বিটের লাঠিছড়ায় অবমুক্ত করেন।


ছবিঃ জুড়ীর সময়

পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম জানান, সোমবার রাতে লোকালয়ে বের হওয়ায় কয়েকজন যুবক ডোমাবাড়ী গ্রামের একটি ছোট পাহাড় থেকে কচ্ছপটি ধরেন। কচ্ছপটি বিক্রি করে দেয়ার পায়তারা চলে।

তিনি জানান, হাছিব আহমদ নামের একটি ছেলে কচ্ছপটি তার কাছে হস্তান্তর করে। তিনি নিজের হেফাজতে নিয়ে দুইদিন কচ্ছপটি যত্নে রাখেন। পরে স্থানীয় বন বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরিকে জানান। ওনার নির্দেশনায় কচ্ছপটি বন বিভাগের সমন্বয়ে বনে অবমুক্ত করেন।

জানা যায়, দেশে মোট ২৯ প্রজাতির কচ্ছপ, কাইট্টা ও কাছিম আছে। এদের মধ্যে হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মহাবিপন্ন প্রজাতি। হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ-এর খোলস লম্বাটে হওয়ার কারণে এরা লম্বা কচ্ছপ নামে পরিচিত।

প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপের গড় দৈর্ঘ্য ৩০ সেমি এবং ওজন ৩-৪ কেজি। স্বভাব ও আবাসস্থল এরা ডাঙাতেই বেশি সময় থাকে। এর ফলে প্রাণীটি খুব সহজেই মানুষের নজরে পড়ে। ডাঙায় থাকে বলেই এটিকে মানুষ প্রায়ই মাংসের জন্য শিকার করে। আর এভাবেই এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
মূলত এরা নিরামিষভোজী। বিভিন্ন পাতা, সবুজ কচি ঘাস, ফুল, ফল ও ব্যাঙের ছাতা অর্থাৎ ফাঙ্গাস খায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মেয়ে কচ্ছপ ১-৭টি করে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে ৯৬-১৬৫ দিন।

এই কচ্ছপ পাহাড়ি এলাকার চিরসবুজ বনে বাস করে। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ বনেই এদের বসবাস। এই কাছিম প্রজাতির বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, চীন, মায়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশে।

বিশ্বব্যাপী এই প্রজাতির কাছিম সঙ্কটাপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনানুসারে রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকায় তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতি সংরক্ষিত। চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ভারতে এদেরকে পোষা প্রাণী হিসেবে পালন করা হয়।

জুড়ীরসময়/খোর্শেদ/হোসাইন