দেশে ব্যাঙের ৬২ প্রজাতি আর মাধবকুণ্ডে ২৫ প্রজাতি



আশরাফ আলী:

বাংলাদেশে ৬২ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। তার মধ্যে ২৫টি প্রজাতির বেশি ব্যাঙের আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া গেছে মাধবকুণ্ডের পাথারিয়া পাহাড়ে। দেশ থেকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাঙের সংখ্যা লোপ পাচ্ছে। পিছনে রয়েছে নানান মানব সৃষ্ট কারণ।

মাধবকুণ্ডে সোনাব্যাঙ, কোলাব্যাঙ, মুরগি ডাকা ব্যাঙ, কোনো ব্যাঙ, লাল চোঁখ ব্যাঙ ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। 

জঙ্গল বয়েছে নানান ব্যাঙের আবাস। নিরদ্বিধায় আবাসস্থল ধ্বংস,  রাস্তায় গাড়ি চাপায় ব্যাঙের প্রাণ নাশ, খাবারের জন্য শিকার ও কীটনাশক ব্যবহার ব্যাঙ বিলুপ্তির প্রধান হুমকি।

পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন এবং দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা  ইসাবেলা ফাউন্ডেশন জানিয়েছে এমন তথ্য। এই গবেষণাটি ফাউন্ডেশনের একদল গবেষকের। মাধবকুণ্ডের পাথারিয়া পাহাড় ও লাঠিটিলায় তাদের গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। তথ্যের রেড লিস্ট বা লাল তালিকা অনুসারে, এর মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

জার্নাল অব এশিয়া-প্যাসিফিক বায়োডিভার্সিটির ২০২১ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬০ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে।  এছাড়া দুটি উভয়চর প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। যা দেখতে কেঁচোর মতো। সবমিলিয়ে দেশে ৬২ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে।

এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চায়নিজ একাডেমি অব সাইন্স ইউনিভার্সিটির মো. মিজানুর রহমান। সাথে ছিলেন কয়োটো ইউনিভার্সিটির কান্ত নিশিকায়া, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ল্যাটানা মিকাহ নেজি ও শের-ই বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী আহসান হাবিব। 

২০২০ সালে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে  একটি ব্যাঙের আবিষ্কার হয়। নতুন আবিষ্কৃত ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম (Raorchestes longchuanensis) বা বুশ ব্যাঙ। ব্যাঙটির আবিষ্কারে নেতৃত্ব দেন ইউনাইটেড আরব আমিরাত ইউনিভার্সিটির শিক্ষক প্রফেসর সাবির বিন মুজাফফর। সাথে ছিলেন গবেষক  হাসান আল রাজী। এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের তখনকার দুই শিক্ষার্থী সাবিত হাসান ও মারজান মারিয়া।

২০২০ সালের শেষের দিকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে Raorchestes রেজাখানী ব্যাঙের আবিষ্কার করা হয়।

পরে ২০২১ সালের মে মাসে জার্নাল অব ন্যাচারাল হিজটরির একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে একটি ব্যাঙ আবিষ্কার করেন হাসান আল রাজী, মারজান মারিয়া ও মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির নিকোলয় পয়ারকভ। নতুন আবিষ্কৃত ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম (Leptobrachium sylheticum) বা লেপ্টোব্রাকিয়াম ব্যাঙ। যা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বিচরণ করে।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে Occidozyga swanbornorum ব্যাঙের আবিষ্কার হয়। যাতে নেতৃত্ব দেন বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী।

বন্যপ্রাণী গবেষকরা জানান, ব্যাঙ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। ফসলের মাঠ রক্ষা করে  ব্যাঙ। তবে বর্তমানে ব্যাঙের দেখা খুব একটা পাওয়া যায় না। অনেকেই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী ব্যাঙগুলোকে মেরে ফেলে। এবিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে জানান গবেষকরা।

ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের বন্যপ্রাণী গবেষক সাবিত হাসান বলেন, ব্যাঙ বিষাক্ত পোকামাকড় খেয়ে আমাদের কৃষি জমিকে রক্ষা করে। বাংলাদেশে  ১৯৭০ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত বিদেশে প্রচুর ব্যাঙ পাচাঁর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশিরা ব্যাঙ পাচারের মতো এই কর্মকাণ্ড গুলো করেছে আমাদের দেশে কীটনাশক ঢুকানোর জন্য। দেশের মানুষকে ব্যাঙ দমনে আসক্ত করেছিল। আমাদের দেশে আজ ব্যাঙ বিলুপ্তির পথে।

তিনি আরও বলেন,  আমরা যদি ব্যাঙ সংরক্ষণ করতাম তাহলে আমাদের কৃষি কাজে ও শাক-সবজি কোনোকিছুতেই পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো না। আমরা আমাদের এই ফসলের মাঠ রক্ষক ব্যাঙ কে সংরক্ষণ করতেই হবে। এখনো বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে যেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

প্লাম্পলরিস জার্মানী এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ও বন্যপ্রাণী গবেষক হাসান আল রাজী বলেন, ব্যাঙ দেখে পরিবেশের অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। যে এলাকায় ব্যাঙ বেশি সে এলাকার পরিবেশ ভালো আর যে এলাকায় ব্যাঙ নেই সে এলাকার পরিবেশের অবস্থা ভালো নয়।

তিনি বলেন, ব্যাঙের উপকারিতা অনেক। খাদ্যশৃঙ্খলের অনেক বড় জায়গা দখল করে আছে ব্যাঙ। ব্যাঙ হত্যা বন্ধ করার জন্য স্কুল লেভেলের বাচ্চাদের বুঝাতে পারলে তারা মানুষকে বুঝাবে।

চা বাগানে ও পাহাড়ে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। যা ছোট খাল হয়ে নদীতে পড়ে ব্যাঙের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে।  যা পরিবেশের জন্য হুমকি বলে জানান এই গবেষক। 

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এএ