বিশেষ প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি ব্রিটিশ আমলে ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ রেলপথটি ছিল এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম ভরসার স্থল। কিন্তু ২০০২ সালে এ গুরুত্বপূর্ণ রেলপথটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেকশনটি পুনর্বাসনের কাজ দেয়া হয় ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’কে। পুনর্বাসন প্রকল্পে কাজ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে ভারতীয় ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ চালু হয় ১৯৮৬ সালে। রেলপথটি প্রতিষ্ঠার পর রক্ষণাবেক্ষণে অব্যবস্থাপনার ফলে রেলপথটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এরপর হঠাৎ করে তৎকালীন সরকার ২০০২ সালে এরেলপথটি বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিবেশমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় ৫২ কিলোমিটারের এ রেলপথ সংস্কারের প্রস্তাব ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন পায়। তখন এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। পরে সরকারি ও দাতাসংস্থার অর্থায়ন মিলে ২০১৫ সালে খরচ ধরা হয় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। ভারতের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর। ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও প্রথম থেকেই গাফিলতি করে আসছে। কাজের ধীরগতি ও গাফিলতির কারণে গত বছর ইআরডির মাধ্যমে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়।
ছবিঃ জুড়ীরসময় |
রেলওয়ে সূত্রে আরো জানা যায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা আলোচনা হয়। সেখানেও দ্রুত কাজ শুরুর তাগিদ দেওয়া হয়। এতেও কোন দৃশ্যমান কাজ না হওয়ায় গত ৯ নভেম্বর ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঢাকা অফিসে ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা ও ঠিকাদারের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। গত ১৮ নভেম্বর কাজ চলমান না থাকায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি করোনার অজুহাত সহ না না বাহানা করে থাকে। এতকিছুর পরও কাজ শুরু না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি বাতিলের মত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়।
ছবিঃ জুড়ীরসময় |
আলাপকালে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বারবার কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেল নির্মাণকে নির্দেশনা দেয়া হলেও তারা কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না। ফলে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এপরিপ্রেক্ষিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে করা নির্মাণ চুক্তি বাতিলের বিষয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে, ইআরডি এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া একমত পোষণ করেছে। সবশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ প্রকল্পের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সভায় আহ্বানের কথা বলা হয়।
ছবিঃ জুড়ীরসময় |
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ রেলওয়ে একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাওয়ায় তারা গড়িমসি করছে। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চরম গাফিলতির জন্য এই প্রকল্পটির বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা না গেলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
কুলাউড়া- শাহবাজপুর প্রকল্পের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন মুঠোফোনে বলেন, এ প্রকল্পের ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুরুত্ব সহকারে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জুড়ীরসময়/এমই/সাইফ