হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক

হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy


মনিরুল ইসলাম::
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের বুক চিরে হলদে ফুলের রাজ্য যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। গাছে গাছে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের বাগানে সাময়িক সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে যেন মন চায়। তাইতো প্রতিনিয়ত পর্যটকরা ভীড় করছে হলদে রানীর রাজ্যে।

সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় আকারের ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ। সকাল গড়িয়ে বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে ঠিক তখনই হাকালুকির সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠে সূর্যমুখীর হাসিতে। মৃদু রোদে দূর থেকে মনে হয় যেন সূর্যের মেলা বসেছে। পুরো হাকালুকি হাওরে যেন বইছে সূর্যমুখীর সু - বাতাস। সূর্যমুখীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন পর্যটকরা ভীড় করছে হাকালুকির বুকে ।

হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy #সূর্যমুখী



হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা পর্যটক জহিরুল ইসলাম বলেন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যিই অসাধারণ। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা হাকালুকি হাওরে এসেছি । মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওর সহ বেশ কিছু এলাকায় তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

প্রথমবারের মতো হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখী চাষ করা মোঃ হোসেন বলেন , আমি  প্রায় দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলনও খুবই ভাল হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় আমার অনেক সূর্যমুখী ফুল ভেঙ্গে গেছে। আগামীতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরোও সম্প্রসারণ করব।

হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy #সূর্যমুখী



সূর্যমুখী চাষী শাহজাহান মিয়া ও রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকবছর যাবত সূর্যমুখী চাষ করেছি। গতবার ঝড়ে সূর্যমুখীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হবে। আমরা সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ পেয়েছি।

তবে সূর্যমুখী চাষীরা  অভিযোগ করে বলেন , সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা অনেক পর্যটক সূর্যমুখী ফুল ছিঁড়ে আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন করেন। পর্যটকদের তারা সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপাশি ফুল না ছিঁড়ার আহ্বান জানান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রনোদনার আওতায় জুড়ীতে ২৫০ জন কৃষক  সুর্যমুখী চাষ করেছে। এবার উপজেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ বিগা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত সূর্যমুখীর মধ্যে আরডিএস ২৭৫  জাতের আবাদ করা হয়েছে।
হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy #সূর্যমুখী


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যমুখী ফুলের  অপরূপ দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের মায়ার ফসলি জমি। তবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যে শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য তা ভাবলে ভুল হবে। মূলত খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে। 
হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy #সূর্যমুখী

চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত। সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় ২/৩  হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়। তাই দিন দিন এ চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকছেন বেশি।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, জুড়ী উপজেলায় মোট ২৫০ থেকে ৩০০ বিগা জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেই লক্ষ্যে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। সূর্যমুখী ভোজ্য তেল হিসেবে গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো। 

হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy #সূর্যমুখী


তিনি বলেন, বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চার্থীদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি ।

হলুদ 'স্বপ্নে' ছেয়ে গেছে হাকালুকির বুক - #হাকালুকি #হাওর #jurirsomoy #সূর্যমুখী



কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, জেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী চাষের চাহিদা বাড়ছে। জেলার প্রতিটি সূর্যমুখী চাষীকে সব ধরনের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

জুড়ীরসময়/এমই/সাইফ