মোঃ মেহেদী হাসান::
স্মার্ট মানুষের চাহিদা সকল ক্ষেত্রের প্রথমে। মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সব কিছুই তারা অর্জন করে নিতে পারে।
স্মার্ট হওয়ার জন্য আপনাকে খুব দামি দামি পোশাক পড়তে হবে এমন নয়। কিছু কৌশল আর অভ্যাস আপনাকে স্মার্ট করে তুলবে।স্মার্ট কাকে বলে?
স্মার্টের সংজ্ঞা জানার আগে আভিধানিক অর্থ জানা যাক। ইংরেজি smart অর্থ:
বুদ্ধিমান,
রসবোধ-পূর্ণ,
উজ্জ্বল,
পরিচ্ছন্ন ও সু-বেশধারী,
চটপটে,
দ্রুত যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি সঠিক চিন্তা করতে সক্ষম।
সংজ্ঞার কথা বললে, অনেকের মাথায় আসে দামি দামি পোশাক কিংবা ব্রান্ডের জিনিস পত্র পড়ে শো অফ করা ব্যক্তিরাই স্মার্ট। আসলে, এটাকে স্মার্ট বা স্মার্টনেস বলে না।
যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের মতে বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা চেতনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির স্মার্টনেস বোঝা যায়। আবার অনেকের মতে স্মার্টনেস যুগের সাথে তাল-মিলিয়ে নিজেকে আপডেট রাখা।সোজা বাংলায় যদি বলি তাহলে, বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ এবং যুগের সাথে নিজেকে আপডেট রাখাটাই স্মার্টনেস।স্মার্ট হওয়ার উপায় জানা যাক।১. মানুষের সাথে চলাফেরার দক্ষতা অর্জন করুন
স্মার্ট শব্দটি মূলত মানুষ এবং সমাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বন-জঙ্গলের পশু-পাখিদের জন্য নয়। আর সামাজিক জীব হিসাবে মানুষের সাথে আপনার আচার-আচরণ এবং চলাফেরার মধ্যেই স্মার্টনেস নির্ভর করে। আপনি যত স্মার্ট হবেন আপনার জীবন-যাপন ও লাইফ-স্টাইল তত নিখুঁত হবে। এরকম কিছু গুণ:
কথা বলার সময় মুখে হাসি এবং চোখে চোখ রাখুন।
সবসময় কথোপকথন সংক্ষিপ্ত করুন। কথোপকথন বৃদ্ধি করতে হলে, অবশ্যই তার ব্যস্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
নতুন মানুষের সাথে বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। কথোপকথনের বিষয় পরিবার, পেশা, পছন্দ-অপছন্দ আর তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
উত্সাহদান এবং ভাল কাজের প্রশংসা করুন।
ইতিবাচক চিন্তা করুন।
অন্যের কথা আগে মনোযোগ দিয়ে শুনুন তারপর উত্তর দিন।
প্রথম পরিচয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন হলে, আগে নিজের সম্পর্কে বলুন তারপর জিজ্ঞাসা করুন।
সততা এবং ওয়াদা রক্ষা করুন।২. ইতিবাচক অভ্যাস করুন
ভাল অভ্যাসই পারে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে তৈরি করতে। কিছু কিছু অভ্যাস আছে যেগুলো আপনার মাঝে নিয়ে আসতে পারলে। খুব সহজেই স্মার্ট হতে পারবেন। যেমন:
প্রশ্ন করুন: সবসময় প্রশ্ন করুন। তবে, এই প্রশ্নগুলো গুগল কিংবা যেসব মাধ্যমে প্রশ্ন করা যায় সেসব মাধ্যমে করুন যেমন: কোয়ারা, বিস্ময় ইত্যাদি। এর ফলে আপনার মধ্যে জানার আগ্রহ তৈরি হবে। আর উত্তর জানার মাধ্যমে আপনার জ্ঞানের বিকাশ ঘটবে।প্রতি সপ্তাহের রুটিন করুন: আপনি ১ সপ্তাহে কি কি কাজ করবেন, তার একটা রুটিন তৈরি করে ফেলুন। এর ফলে, আপনার কাজের প্রোডাক্টিটিভিটি বাড়বে। সেই সাথে কোন কাজ বাদ যাবে না।
প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন: প্রতিদিন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। আর পূর্বে শেখা বিষয়গুলো রিভিশন দিন।
৩. মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন
আপনি কতটা স্মার্ট সেটা আপনার মস্তিষ্কের উপর নির্ভর করে। কেননা পূর্বে উল্লেখ করেছি বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতা হল স্মার্ট হওয়ার উপায়। আর এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রয়োজন মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি। মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যেসব কাজ করতে পারেন। যেমন:সৃজনশীল কাজ কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। সেটা হতে পারে গাছের, গ্রামের প্রকৃতির,ঘর-বাড়ির ছবি আঁকা।
গণিত সমাধান করুন। এছাড়া, মানসিক দক্ষতা তথা IQ সমাধান করুন। এসব, অনুশীলন আপনার মস্তিষ্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. শিক্ষাতে মন দিন
বলা হয় শেখার কোন শেষ নেই, তেমনি শেখার কোন বয়স নেই। হতে পারে আপনার অ্যাকাডেমি পড়াশোনা শেষ। কিন্তু, শিক্ষার কিন্তু শেষ হয়নি। নিয়মিত শেখার মধ্যে থাকুন। যেমন:
বিভিন্ন ধরণের বই পড়া: সেটা হতে পারে, সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, আত্মজীবনী কিংবা ভ্রমণ। এই ধরণের বই পড়ার দ্বারা জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি, দক্ষতা এবং ভাষা-গত ভাণ্ডার বৃদ্ধি পাবে।৫. আপনার জীবনকে প্রসারিত করুন
বাক্যটি হয়তো কঠিন মনে হতে পারে। এর মানে হলও আপনার জীবনকে চার দেয়াল কিংবা নির্দিষ্ট কোন গণ্ডির মধ্যে বন্দি রাখবেন না। তাহলে, নতুন কিছু শেখার বা মানসিকতা প্রসারিত হবে না। জীবনে বেঁচে থাকার সার্থকতা বুঝা যাবে না। জীবনকে প্রসারিত করতে যা যা করতে পারেন।
ভ্রমণ করুন: ভ্রমণ করুন, হোক সেটা নিজের দেশ। ভ্রমণ থেকে আপনি নিজের ভুল এবং মানুষের সাথে চলার অভিজ্ঞতা পাবেন। সেই সাথে পৃথিবীর সৌন্দর্য আর মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাবেন।
নতুন ভাষা শিখুন: নতুন ভাষা শিখুন। সেই ভাষায় বই পড়ুন। সেই ভাষার মানুষের জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন।
পরিবারকে সময় দিন: আপনার পরিবার আপনার জীবনের প্রধান অংশ। সুতরাং, আপনি যদি খুব ব্যস্ত থাকেন। তবে, দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় শুধু পরিবারের জন্য বরাদ্দ রাখুন।
বন্ধুদের সাথে সময় দিন: বন্ধুদের সাথে সময় দিন। তাদের, সাথে আনন্দ কিংবা হ্যাং হাউট করুন।
পরিশেষে
স্মার্ট হওয়ার উপায় আসলে অনেক। এই সংক্ষিপ্ত লেখায় আমি শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।ইসলাম যেগুলোর অনুমতি দেয় না;সেগুলো করা যাবে না।আর যেগুলোর অনুমতি দেয় সেগুলো করতে পারেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এবিডি