হাকালুকিতে চাষ হচ্ছে সম্ভাবনাময় চিনাবাদাম

সাইফুল্লাহ হাসান::

এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি। এই হাওরেই এখন বাদাম চাষ হচ্ছে। ভালো ফলন ও লাভ দেখে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে কৃষকদের দাবি সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা আরও এগিয়ে নিতে পারবেন। আর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা এখন আশার আলো দেখছেন। 

তবে এবছর বিরূপ আবহাওয়া থেকে বাদামকে রক্ষা করতে আগেভাগেই বাদাম তুলে ফেলার জন্য চাষিদের জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাদামের ক্ষতি হতে পারে, সেজন্য কৃষকরা বাদাম তোলা শুরু করেছেন। আর যারা একটু উঁচু জমিতে বাদাম চাষ করেছেন তারা আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করছেন। 

প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে হাকালুকি হাওরে থৈ থৈ পানি থাকে, সেখানে শীত মৌসুমে রবিশস্যের সবুজে সমারোহ। পুরো হাওরের এই সবুজ প্রকৃতি মন কাড়ে যে কারো। এই দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষজন। 


সম্প্রতি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বেলাগাঁও এলাকার হাকালুকি হাওরের অংশে গেলে দেখা যায়, পুরো এলাকাজুড়ে ফসলের সারিবদ্ধ মাঠ সবুজে ভরপুর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে আকর্ষণীয় বাদাম ক্ষেতের মাঠ। ক্ষেতে কৃষকদের নিজ নিজ কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে। এসময় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছর থেকে হাওরের বুকে বাদামের চাষ হয়ে আসছে। কম খরচে ফলন ভালো হওয়ায় বেশিরভাগ চাষি অন্যান্য ক্ষেতের পাশাপাশি এখন বাদাম চাষে নজর দিচ্ছেন। 

এসময় বাদাম চাষি শাহ জাহান বলেন, ‘গত ৫ বছর থেকে আমি বাদাম চাষ করছি। এবার বাদামের ভালো ফলন হয়েছে আমার। এবছর ১ কেয়ার জায়গায় বাদামের চাষ করেছি। গত বছর প্রতি কেজি বাদাম খুচরা ৯০ টাকা ও পাইকারি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। এ বছর আশা করছি সাত থেকে আট মণ বাদাম উৎপাদন হবে।’ 

আরেক চাষি সাইফুল আলম। তিনি ৩০ শতক জায়গায় বাদামের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুবাই থাকতাম। এসে আমাদের জায়গায় ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি চাষ শুরু করি। বিশেষ করে গত ৩ থেকে ৪ বছর থেকে বাদাম ও সূর্যমুখী চাষ করছি। এগুলো চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছি।’ 

সাইফুল আরও বলেন, ‘সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করি না, সারাবছর আমরা এই তেল দিয়ে আমাদের পরিবার চলে। আর বাদাম কিছু বিক্রি করে ফেলি। বাকিগুলো নিজের জন্য রেখে দেই। আশা রাখি এবারও লাভবান হবো। আমাদের এলাকার বেশিরভাব মানুষই কৃষি নির্ভর।’ 

মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবছর ৪৯ হেক্টর জায়গায় বাদামের চাষ হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক চিনা বাদাম বারি-৮ ও বারি-৪ রোপণ করেছেন। আবওহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও এসব এলাকার মাটি বাদাম চাষের উপযোগি হওয়ায় গত চার-পাঁচ বছর থেকে ভালো ফলন হয়ে আসছে বাদামের। 

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলায় এবছর ১১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে হাকালুকি হাওরে। বাদামের চাষ বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে।’

তিনি বলেন, ‌‌‌‌‌‌‘সামনের দিনগুলোতে ঘূর্ণিঝড়সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ঝড়-বৃষ্টির কারণে হাওর এলাকায় বন্যা হয়ে যায়। এতে বাদামের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কষ্টের ফসল যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা কৃষকদের জানিয়েছি। অনেকেই ইতোমধ্যে বাদাম তোলা শুরু করছেন।’


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, ‘বাদাম একটি সম্ভাবনাময় ফসল। জেলায় ধীরে ধীরে বাদাম চাষের চাহিদা বাড়ছে। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হচ্ছে। রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এস