ফান্ডে টাকা না থাকায় জুড়ীতে স্কুল নির্মাণকাজে ধীরগতি

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের পূর্ব বেলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে ধীরগতিতে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানর অভিযোগ ফান্ডে টাকা না থাকায় ধীরগতি।

দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পূর্ব বেলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়েই পুরাতন ভবনে অফিস করছেন।বিদ্যালয়টি মূলত বন্যা কবলিত হাকালুকি হাওরের জুড়ী নদীর পাড় ঘেঁষে বেলাগাঁও গ্রামে অবস্থিত। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এই গ্রামটি সুবিশাল হলেও এই গ্রামে রয়েছে মূলত দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত রেজিস্টার এই বিদ্যালয়টি বর্তমানে সরকারিকরণ হওয়ায় আশার আলো দেখছিল গ্রামবাসী। 

সরকারিকরণের পর দু'তলা ভবন বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম অবহেলা ও গাফিলতির ফলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ বিদ্যালয়ে হাঁটুপানি থাকে বিদায় বর্ষার পূর্বে নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হলে আসন্ন বর্ষায় শিক্ষার্থীরা চরম দূর্ভোগে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, চাহিদা ভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এ বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের কাজ পায় বিএম ট্রেড সেন্টার, ঢাকা।বিদ্যালয় নতুন ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮শ ৫৮ টাকা। ভবনের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর।কাজ শুরুর এক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন কাজ না করেই সময় বাড়ানোর আবারো ও আবেদন করলে সরকার নির্মাণের সময় বৃদ্ধি করে ২০২১ ইং সনের ২৫ এপ্রিল এরমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার নতুন সময় নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি।নতুন ভবনের পাইলিং করার পর পাইলিংয়ের এক অংশে কিছু বালু ফেলা ছাড়া আর কোনো কাজই করেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, বিগত এক বছর পূর্বে ভবন নির্মাণ শুরু হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে এখনো ভবন নির্মাণ না হওয়ায় আমরা ঝুঁকি নিয়ে পুরাতন ভবনে অফিস করছি।আগামী বর্ষার পূর্বে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা না গেলে শিক্ষার্থীরা চরম দূর্ভোগে পড়বে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম মীম জানান, আমাদের বিদ্যালয় বর্ষার মৌসুমে হাটু পানিতে নিমজ্জিত থাকে। আমাদের বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ হলে আমরা ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারব।

বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ তাহের আলী বলেন, কাজ দ্রুতগতিতে শুরু করার লক্ষ্যে আমরা ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসী উপজেলা নিবার্হী অফিসারের নিকট দরখাস্ত জমা দিয়েছি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএম ট্রেড সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মুহিবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, প্রয়োজনীয় ফান্ড এর অভাবে আমরা কাজ করতে পারছিনা। তবে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করব।

উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মতিন এ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

জুড়ীর সময়/এমই/এমএম