নিজস্ব প্রতিবেদক::
জানা যায়, অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে মরা মাছ ভেসে থাকতে দেখা যায়। মাছ পচে যাওয়ায় নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে এবং দুর্গন্ধে নদীর পাড়বর্তী এলাকার মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারেন। পানি দুষিত হওয়ার বিপাকে পড়েছেন শীতকালীন সবজি চাষীরা, সেচ দিতে পাড়ছেন না জমিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা থেকে জুড়ী নদী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ও ফুলতলা ইউনিয়ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীর উজানে ভারতের বেশ কয়েকটি চা বাগান রয়েছে। সেই চা-বাগানে বিষাক্ত কিটনাশক প্রয়োগ করার পরে অতিরিক্তটুকু সরাসরি নদীতে ফেলে দেয় তারা, আর এই বিষটোপ নদীর বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তাছাড়া স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শুকনো মৌসুমে নদীর পানির স্তর কমে গেলে সুযোগ নেয় কিছু অসাধু ব্যক্তি। তারা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নদীতে বিষ মেশায়, যা পরে স্রোতের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অংশে প্রবেশ করে বিপুল ক্ষতি ডেকে আনে।
লুৎফুর রহমান শাহান বলেন, উজান থেকে আসা বিষটোপে জুড়ী নদীর অসংখ্য মাছ মারা যাচ্ছে। ক্যারেট ক্যারেট মাছ ধরছে অনেকে, এতো পরিমাণে মাছ মরছে। এছাড়াও পানিতে মাছ পঁচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। অথচ এই নদীর সাথে নদীপাড়ের বাড়ির জেলেসহ অসংখ্য মানুষের জীবিকা জড়িত। এগুলো বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত।
পরিবেশকর্মী খোর্শেদ আলম বলেন, নিয়মিত নদী মনিটরিং ও সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে নদী ব্যবস্থাপনা কমিটির তত্ত্বাবধানে বিষপ্রয়োগ বন্ধের দাবি জানাই। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জুড়ী নদী ও এর সংযুক্ত হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ভবিষ্যতে স্থানীয় মৎস্য সম্পদ ও জীবিকার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা আবুল মিয়া বলেন, পানি এখন এমনভাবে দূষিত যে রান্না বা গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই নদীর পানি ব্যবহার বন্ধ করে কৃষির জমিতে সেচের জন্য টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. আজিজ বলেন, “নদীতে বিষ প্রয়োগ করলে নদীর ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীর জীববৈচিত্র্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল—কাদার মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে ছোট মাছ বাঁচে, ছোট মাছ খেয়ে বড় মাছ, আর বড় মাছের ওপর নির্ভর করে ভোঁদড়, সাপ, ব্যাঙ ও কাঁকড়ার মতো প্রাণী।
এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ এবং বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। জুড়ী সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় উজানে, বিশেষ করে ভারতীয় অংশ থেকে মাঝে মাঝে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে স্থানীয়ভাবেও এমন ঘটনা দেখা যায়। বিজিবি এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন চা-বাগানে কীটনাশক প্রয়োগের পর অবশিষ্ট অংশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে। এই বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মৎস্য অধিদপ্তর সর্বদা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে এবং বিষ প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ অব্যাহত রেখেছে।
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন
