জুড়ীতে এক সপ্তাহে ১৮ গরু চুরি, আতঙ্কে মানুষ

জুড়ীতে এক সপ্তাহে ১৮ গরু চুরি, আতঙ্কে মানুষ
প্রতিকী ছবি


নিজস্ব প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে বেড়েছে গরু চুরি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কৃষকের ১৮টি গরু চুরি হয়েছে। যার কারণে গরু মালিক ও খামারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক গরু মালিক রাত জেগে নিজের গরু পাহারা দিচ্ছেন। কেউবা আবার গরু হারিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে চুরি হওয়া গরু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে চুরি হওয়া গরুর কোন সন্ধান না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। সাম্প্রতিক এই চুরির ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন জুড়ীতে গরু চোরের মদদ দিচ্ছে কারা? জুড়ীর প্রশাসন জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? মানুষের নাকের ডগা থেকে লাখ টাকার গরু নিয়ে যায়। অথচ চোরের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না! এভাবে ঘর ডাকাতি, গরু চুরি, ছাগল চুরি হলে মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করবে?

গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা যায় উপজেলা জুড়ে ১৮টি গরু চুরি হয়েছে। জানা যায়, উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের দূর্গাপুর থেকে এক রাতে ১৩টি, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর থেকে ১টি ও জায়ফনগর ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রাম থেকে ৪ টি সহ মোট ১৮ টি গরু চুরি হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাছিরপুর ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ভবানীপুর এলাকায় এই চুরির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায় শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই জুড়ীতে ৩০টি গরু চুরি হয়েছে। যার ফলে অনেকেই নিংস্ব হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দূর্গাপুর গ্রামের তানিম আহমেদ, আব্দুল মতলিব, রুবেল মুন্ডা, বাছিরপুর গ্রামের তুহিন আহমেদ ও উত্তর ভবানীপুরের লাকি রাণী নামে ৫ জন মালিকের মোট ১৮টি গরু নিয়ে যায় চুর চক্র। পরে তারা বিভিন্ন সন্দেহমূলক স্থানে তল্লাশি করে কোন সন্ধান পায়নি গরুর। এ ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় খামারী সহ পুরো এলাকাবাসী। গরু চুরির ঘটনায় থানায় জিডিও করেছেন ভোক্তভোগীরা।

চুরি যাওয়া গরুর মালিক তানিম আহমেদ জানান, আমাদের বড় একটি সম্বল গরু। একরাতে চুরচক্র আমাদের সব গরু নিয়ে গেলো। কয়েকদিন আগে গাভী একটি বাছুর দিয়েছে। চুরচক্র সেই ছোট্ট বাছুর রেখে মা গাভী নিয়ে গেছে। এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। এখন ছোট্ট বাছুরটিকে বাঁচানো কঠিন!

গরু হারিয়ে নিংস্ব লাকি রানী বলেন, গরুগুলো ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র অবলম্বন। এগুলো দিয়ে সংসার চালানো, মেয়েদের পড়ালেখার খরচ সবগুলো চলতো। এখন কিভাবে সংসার চালাবো?

লাকি রাণী আরও বলেন, কয়েকদিন আগে অর্থের অভাবে একটি গরু বিক্রি করেন ৩৫ হাজার টাকায়। বিক্রির পর দুটি গাভী ও দুচি বাছুর ছিল। রাতে গরুগুলো গোয়াল ঘরে রেখে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি গোয়ালঘরের তালা ভাঙা আর ভেতরে গরু নেই। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এঘটনায় লাকি রানী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এবিষয়ে পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহেল উদ্দিন বলেন, আমার ইউনিয়নে তেমন কোন বড় ধরনের সমস্যা নেই। আপনারা জানেন ইতিমধ্যে গরু চোরের উপদ্রব একটু বেড়ে গেছে। বিভিন্ন ভাবে গরু চোরের একটি চক্র আবারও মাথা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গরু চুরির বিষয়টি শূন্যের কোটায় নিয়ে আসছি। তবে, বিগত সময়ে যারা গরু চুরির সাথে জড়িত ছিল তারা আবার এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমার এলাকাবাসী নিয়ে প্রশাসনের সহযোগীতায় পূর্বজুড়ী তথা জুড়ী উপজেলাকে আবারও চোর মুক্ত করবো।

সচেতন নাগরিক আশরাফুজ্জামান রিশাদ বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী জুড়ীতে এতো খারাপ সময় যায় নাই, গত মাস তিনেক থেকে যেমন যাচ্ছে। চুরের উপদ্রুপ দিন দিন যেন বেড়েই চলছে।

কয়েক বছর আগে কয়েক লক্ষ্য টাকা ব্যয় করে জুড়ী বাজারকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা হয়। যার তদারকিতে ছিল জুড়ী থানা পুলিশ। কিন্তু জনগনের লক্ষ টাকার বিনিময়ে কেনা সিসিটিভির কোনো সৎ ব্যবহার আমরা দেখি নাই। পুলিশ চাইলে সেগুলো ঠিক করে চুরি রোধে ব্যবহার করতে পারতো। কিন্তু তা হয় নাই বরং জনগণের টাকা নিয়ে সিসিটিভি লাগানোর নাম করে আইওয়াশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সবদিক মিলিয়েই আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি, চুরি, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পিছনে পুলিশের অবহেলা প্রধান কারণ।

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, এঘটনায় ভোক্তভোগীরা থানায় মামলা করেছে। গরু চুরির বিষয়ে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। গতকাল আমরা জুড়ী উপজেলার সাগরনালের বিখ্যাত গরু চুর জুনায়েদকে গ্রেপ্তার করেছি।

তিনি বলেন, চুড়ান্তভাবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। চুর একিবারে নির্বংশ করে দেব। আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই।

জুড়ীরসময়/কেআ/সাইফ