শৈশবের ঈদকথা

শৈশবের ঈদকথা

সাহান হোসেন::

ঈদের বাকি আর মাত্র ৭ দিন। শুরু হয়ে গেছে ঈদের আমেজ। আব্বুর মাসিক টাকা পাঠানোর অপেক্ষায় পুরো পরিবার। পাওয়া মাত্রই যেতাম ঈদের বাজারে। অন্তত দশের অধিক দোকান ঘুরে একটা পোশাক পছন্দ হতো। পরিবারের শপিং বিশেষজ্ঞরা অনেক দামাদামি করে কাপড় নিতেন।

এ গেল শপিং পর্ব। মেহেদি মাখার পালা আরও উত্তেজনাপূর্বক। পাশের ঘরের ভাবি অথবা ফুফু মাঝেমধ্যে নিকটস্ত বড় বোন; তাদের কাছেই রাখতাম আবদার। তারা কাজের অজুহাত দেখাতেন। কিন্তু তাদেরকে সেরা মেহেদি শিল্পি ঘোষণা করে তাদের কাছে যাওয়ায় তারা পুলকিত অনুভব করতেন।

ঈদপূর্ববর্তী প্রয়োজনীয় কাজ স্থগিত রেখে তারা আমাদের আবদার মেটাতেন। ও হ্যাঁ আমাদের বলতে আমি, আমার ছোট বড় ভাই-বোন, কাছের অগ্রজ-অনুজ প্রতিবেশি। এখানে আমাদের বেশ মুন্সিয়ানা দেখাতে হতো। কার আগে কে মেহেদির রঙে রঙিন হবে এই প্রতিযোগিতায়। কখনো মেহেদি শিল্পীর আম্মা বজ্রকন্ঠে আওয়াজ দিয়ে আমাদের আর্টিস্টকে নিয়ে যেতেন। আবার কখনো শেষের দিকে কখনো মেহেদি শেষ হয়ে যেতম। এতে দুই- একজনকে কান্না ভরা চোখে হতাশ হতে হত। কান্নাকাটির রেশে ঈদের দিন সকালে মেহেদি কিনে এনে তাকে মাখানো হতো। এরপর সকল মেহেদি হাতওয়ালা নিজেদের মধ্যে শুরু করতেন বাহাস; "তোমারটা নায় আমারটা সুন্দর, না আমারটা সুন্দর, আমারটার রঙ গাঢ় বেশি, আমার মেহেদি লাল বেশি"। অতপর শুরু হতো প্রদর্শনীর পালা। যারে পাইতাম তারে হাতের মেহেদি দেখাইতাম, সবাই উৎসুক হয়ে দেখতেনও।

চাঁদ রাত্রে মা-চাচিরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানাতেন। উৎসাহ নিয়ে তাদের কারুকার্য দেখতাম, মাঝে মধ্যে নিজেও পিঠা বানাতে হাত লাগাতাম। তয় বেশির ভাগ সময় রাতের মধ্যেই পিঠার স্বাদ পাইবার ভাগ্য হতো না; ঘুম চলে আসতো। ফজরের পরপর-ই খুব সকালে নিদ্রা তাড়াইয়া দিতাম। লুঙ্গি নিয়া দিতাম দৌড় গোসল সেড়ে নিতে। গোসল সেড়ে বাড়ির পাশে একটা মোড়ে সবাই একত্রিত হতাম। অল্প বাহাস হতো এই নিয়ে যে ; কে সবার আগে ঘুম থেকে উঠলো। এরপর তাড়াহুড়ো করে নতুন কাপড় পরিধান করতাম। পরিবার অনেক বড় হওয়ার সুবাদে সালামের পালা বেশ লম্বা হতো। আমি আর আমার অগ্রজ ভাই (যে এখন প্রবাসে অবস্থান করছে) মিলে পালাক্রমে সবাইকে পা ছুয়ে সালাম করতাম। সালাম করার সাথে সাথে তৎক্ষনাত সালামি চেয়ে বসতাম। আম্মুর কাছে সালামির আলাদা আবদার থাকতো। রজজানের শুরু থেকে জপে আসতাম -" এই পরিমান সালামি দিতেই হবে"। সালামি বুঝে নিয়ে সেমাই খেয়ে দলবেধে রওয়ানা দিতাম ঈদগাহ'র দিকে। ঈদের নামাজ শেষে মুসাফার অংশ ছিল অতি রোমাঞ্চকর।

ঈদের সৌন্দর্য এখানেও বুঝি নিহিত। এখান থেকে প্রতিবেশি বন্ধুবান্ধব নিয়ে সোজা চলে জেতাম ঈদের মেলায়। মেলায় গিয়েই আগে একটা পিস্তল কিনতাম। সারাদিন ঘুরে খানিক ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতাম। তবে এই ক্লান্তির সাথে থাকতো অসম্ভব খুশি। এরপর ঈদের ৭ দিনের ভিতর কুটুমবাড়ি বেড়ানো মিস দিতাম না; এর একটাই উদ্দেশ্য সালামির লোভ। ছোটবেলায় ভিষণ সৎ লোভী ছিলাম। সেইদিন গুলি আর ফিরে পাবো না। তবে যে সমস্ত স্মৃতি জমিয়েছি ; মস্তিষ্ক সচল থাকা অবস্থায় কখনো রোমন্তন করতে ভুল হবে না। প্রায় সকলের-ই শৈশব মধুময় এবং নিষ্পাপ। স্রষ্টা আমাদের শৈশবের মতো নিষ্পাপ রাখুন আজীবন। ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে, ঈদ মোবারক।

লেখক: সাহান হোসেন

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/হোসাইন