ক্যাম্পাসে সকল ধরনের সভা, মিছিল, শোডাউন নিষিদ্ধ চাই!

ক্যাম্পাসে সকল ধরনের সভা, মিছিল, শোডাউন নিষিদ্ধ চাই!


মোঃ ওয়াজ উদ্দিন মিনহাজ::

প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রায় ৯ লক্ষ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। অপরদিকে দেশের ২০টি স্বায়ত্তশাসিত সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ৬টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ সহ দেশে মোট ৪৬টি সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯ লক্ষ ভর্তিচ্ছুর বিপরীতে আসন সংখ্যা মাত্র ৬৩ হাজারের কিছু বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত এই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীদের একজন হওয়ার জন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একধরনের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বভাবতই নিজেদের প্রাণের ক্যাম্পাস নিয়ে একধরনের কৌতূহল কাজ করে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ, পরিস্থিতি আর সার্বিক দিক বিবেচনা করে তারা আনন্দিত কিংবা শঙ্কিতও হোন৷

অতীতে আমরা দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির করাল গ্রাসের শিকার হওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের গল্প বহুবার শুনেছি  এবং দেখেছি। রাজনীতি একজন ব্যক্তির রাষ্ট্রীয় অধিকার আর রাজনীতির চর্চা হওয়া উচিত রাজনৈতিক কার্যালয়ে। দেশের প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্র রাজনীতিমুক্ত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার এখনই উপযুক্ত সময়। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সকল ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোডাউন নিষিদ্ধ করে সুষ্ঠু ধারার শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷ পাঠদানের সাথে জড়িত শিক্ষকবৃন্দকে অবশ্যই দলীয় লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ডের আওতামুক্ত হতে হবে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর কিছুটা হলেও বর্তায়৷

এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস কিংবা ছাত্রীনিবাস তথা হলে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়কে ছাপিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মেধাক্রম, শিক্ষার্থীর পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এনে মৌখিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীর বিবৃতি যাচাই পূর্বক আসন বরাদ্দ করতে হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে গেস্টরুম যেন এক অন্যতম ভয়াবহ অধ্যায়ের নাম৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিতি পর্বের নামে ইমিডিয়েট সিনিয়রদের অকথ্য গালিগালাজ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তথা র‍্যাগিং চিরতরে নির্মূল করতে হবে৷ ক্যাম্পাসের উন্নয়নমূলক কাজে শিক্ষার্থীদের মতামতের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্যান্টিনের খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করণের পাশাপাশি ন্যায্যমূলে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে৷

শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করতে প্রতিটি ক্যাম্পাসে যুগোপযোগী বই সমৃদ্ধ পাঠাগার স্থাপনা এখন সময়ের দাবি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য এবং যৌক্তিক দাবি প্রশাসনের নিকট উত্থাপনের মাধ্যম হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক পরিষদের মতো অরাজনৈতিক সংস্থা তৈরি করতে হবে৷ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করাও একান্ত প্রয়োজন৷ 
সর্বোপরি, ছাত্র-শিক্ষক তথা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই প্রত্যাশিত ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন সম্ভব৷ 

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/খালেদ