বিপ্লবের মাস আগষ্ট

বিপ্লবের মাস আগষ্ট


মানুষ তার অধিকার আদায়ে জীবনের শেষ বিন্দু দিয়েও হলে লড়াই করতে প্রস্তুত। বিল্পব কখন কোথায় কোন মাসে হয় তা বলা বড় কঠিন কাজ। তবে অতীত ঘাটলে দেখা যায় তা। উপমহাদেশের ইতিহাসে আগষ্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। পাক-ভারত স্বাধীনতা কিংবা বাংলাদেশে স্বৈরাচার পতন, সবগুলোই আগষ্ট বিপ্লবের অংশ।

অভিবক্ত ভারতে আগস্ট মাসে সবচেয়ে বড় আন্দোলনের ডাক দেন মহাত্মা গান্ধী। ইতিহাসে যা ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ নামে খ্যাত। ব্রিটিশ বিরোধী সেই গণবিক্ষোভের সূচনা হয় ১৯৪২-র ৮ আগস্ট। আন্দোলনের শুরুতেই গান্ধী-সহ স্বাধীনতাকামী এদেশের প্রায় সমস্ত নেতাকেই গ্রেফতার করেছিল ব্রিটিশ পুলিশ। যা পরবর্তীতে স্বাধীনতার ফসল হিসেবে ঘরে উঠে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বড় আগস্ট বিপ্লবের কথা বলতে গেলে অবশ্যই আসবে ভিয়েতনামের প্রসঙ্গ। ১৯৪৫-র ১৬ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত যা চলেছিল। দু’সপ্তাহের এই আন্দোলনে গদি হারায় ভিয়েতনামের রাজপরিবার। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে সেখানে ক্ষমতায় আসে ভিয়েত মিন।

পাক ভারত স্বাধীনঃ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বাংলা ও ক্রমান্বয়ে ভারত দখল করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে। এরপর প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের হাতে শাসনও শোষণের স্বীকার হন উপমহাদেশে জনগন। র্তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলি ঘোষণা করেন ব্রিটিশ সরকার পরের বছর ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন ভারতকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যাবে। ওই মোতাবেক সব দলে প্রস্তুতি চলতে থাকে। কিন্তু তারা ১৯৪৭ সালের অগাস্টে ধর্মের ভিত্তিতে ২টি দেশ পাকিস্তান এবং ভারতকে স্বাধীনতা দিয়ে চলে যায়। অগাষ্টের ১৪ তারিখ পাকিস্তান ও অগাস্টের ১৫ তারিখ ভারত স্বাধীনতা দিবস পালন করে।

শেখ মুজিব হত্যাঃ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের হাত থেকে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। পরের বছর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দায়িত্ব নেন দেশের। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠন করতে গিয়ে হিমসিম খান তিনি। বেড়ে যায় চুরি ডাকাতি, দুর্নীতি। দ্রব্য মূল্য উর্ধ্বগতি। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। যেই স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয় তা এখন একদলীয় বাকশাল শাসনে রুপ নেয়। তখনই ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীর একটি অংশ ১৫ই আগষ্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব পরিবারের হত্যা করে। বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

২০২৪ স্বৈরাচার পতনঃ ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় বসেই শুরু করেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীল নকশা। ২০০৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করলেও নিজে ক্ষমতার চেয়ারে বসে তা সংবিধান থেকে বাতিল করেন। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়। বিরোধী মতের অনুসারীদের খুন গুম চলতেই থাকে। দেশের ইতিহাস ভোটারবিহীন ৩টি নির্বাচন করে ভারতের সহয়তায় আওয়ামী লীগ। যা দেশে নিশিরাতের ভোট নামে পরিচিত। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি জামায়াতসহ আলেমদের গ্রেফতার করে দেশে কার্যত বাকস্বাধীনতাহীন একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিভিন্ন সময় ভারতেকে সুবিধা দিয়ে দেশবিরোধী চুক্তি করে হাসিনা সরকার। তারপর ২০২৪ সালের জুলাইতে কোটা সংস্কার আন্দোলন মাধ্যমে শুরু হওয়া আন্দোলন নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে দেশের হাসিনা বিরোধী গনজাগরণ সৃষ্টি হয়। তীব্র আন্দোলনে  ৫ই আগষ্ট ভারতে পালিয়ে যায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। বিজয় হয় দেশের ও দেশের সার্বভৌমত্বের।

মানুষ পরাধীন হয়ে থাকতে চায় না। তাই যুগে যুগে গনজোয়ারের মাধ্যমে পতন হয় জালিম শাসকের। জনতার জয় নিশ্চিত আজ কিংবা কাল।