মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি ছাত্রদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেছেন। এই পদত্যাগ নিয়ে তার অনুসারীরা সমালোচনা শুরু করেছেন। তাদের দাবি হলো এই পদত্যাগ ঠিক হয়নি। পদত্যাগ করতে হলে বাকি জনপ্রতিনিধিদের পদত্যাগ করতে হবে। আসলে বিষয়টি কি? এটি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কেন এতো সমালোচনা!
পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, জুলাই মাসে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে জুড়ীতে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে। সেই মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এরপর আরও কয়েকটি মিছিল হয় যেগুলোতে ছাত্রলীগ এবং শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হয়।
গত ৩ আগস্ট শিক্ষার্থীদের মিছিলের শেষ দিকে জুড়ীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তাদের হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট জুড়ীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলের শেষের দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপরে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হমলায় আহত হন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি নিরব ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু পরদিন ৪ আগস্ট আক্রমনকারীদের সাথে নিয়েই জুড়ীতে আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল এবং শিক্ষার্থী ও কেউ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিলে প্রতিহত করতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন জুড়ীতে। এতে নেতৃত্ব দেন জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি এবং ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমেদ (জুয়েল রানা)।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা নতুন করে দাবি তুলে ৫ আগস্টের আগে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সকল জনপ্রতিনিধিদের পদত্যাগ করতে হবে।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুড়ীরসময়ের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গত ১৪ আগস্ট জুড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি ও ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ (জুয়েল রানা) এর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে। পরদিন ১৫ আগস্ট ছাত্রদের দাবির মুখে উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি পদত্যাগ করেন।
এখন কথা হচ্ছে এই বিষয়টি নিয়ে এতো আলোচনা কেন? তবে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এছাড়াও কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। একে একে সবাইকে পদত্যাগ করতে তাদের এই আন্দোলন। তাদের প্রথম দফা উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাদের আন্দোলন চলমান। শুক্রবার রাতে একটি ভিডিও বার্তায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের এই বিষয়টি পরিষ্কার করে।
যেহেতু জনপ্রতিনিধিগণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন গণ-অভ্যুত্থানের পর নৈতিক জায়গা থেকে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। কারণ আগের সেই অবস্থানে নেই জনপ্রতিনিধিগণ। ছাত্র জনতার বিজয়ের পর পদত্যাগের এই বিষয়টি সামনে আসা অস্বাভাবিক কিছুই নয়।
আমরা চাই প্রতিটি বিষয়ের যৌক্তিক আলোচনা এবং সমালোচনা। প্রতিটি বিষয়ের যৌক্তিক সমাধান। শিক্ষার্থী এবং জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন হোক। যারা ভুল করেছে তাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পারুক। ভুলের প্রায়শ্চিত্য নিজেরা করুক। আসুন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করি।