হঠাৎ মিথ্যা মামলা! কি করবেন?

হঠাৎ মিথ্যা মামলা! কি করবেন?

তানজিমুল ইসলাম::

মিথ্যা মামলার সংজ্ঞা- মিথ্যা মামলা হল একটি আইনগত সমস্যা যেখানে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য বা ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে মামলা করে। এর ফলে নির্দোষ ব্যক্তি আইনগত সমস্যায় পড়তে পারে এবং ব্যক্তিগত, সামাজিক, ও পেশাগত জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

হঠাৎ মিথ্যা মামলা হলে কি করবেন ? 

কেউ আপনার বিরুদ্ধে শত্রুতা করে মিথ্যা মামলা ঠুকে দিলেন। আপনি মামলার খবর শুনে যতটা হতবাক, তার চেয়েও দুশ্চিন্তায় পড়লেন, কীভাবে মিথ্যা মামলার অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন। মনে রাখতে হবে, আপনি অপরাধী, না নিরপরাধ, সেটি মামলায় অভিযুক্ত হলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। 

আইনের চোখে আপনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিরপরাধ। ধরুন, আপনার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা হলো। আপনি দোষী বা নির্দোষ, সেটি পরে প্রমাণিত হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে আপনি যেন এ মামলা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারেন, সেই চেষ্টা করতে হবে।

থানায় মামলা হলে করণীয় -

যদি আপনার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়, তাহলে এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। মামলার এজাহারে দেখতে হবে, অভিযোগগুলো জামিনযোগ্য বা জামিনঅযোগ্য কি না। অভিযোগ তেমন গুরুতর না হলে এবং জামিনযোগ্য হলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন।

যদি এমন হয় যে আপনি জানতে পারলেন না, আপনার বিরুদ্ধে থানায় এজাহার হয়েছে। পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেপ্তার করলো আপনাকে থানায় নিয়ে গেল। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। যদি রিমান্ড চায় পুলিশ, তাহলে আপনার আইনজীবীর উচিত হবে রিমান্ড বাতিলের জন্য আবেদন করা। যদি জামিন দেন আদালত, তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় আপনার জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। যদি জামিন না হয়, তাহলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।

নিম্ন আদালতে অব্যাহতি না পেলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ জামিন-অযোগ্য হলে অনেককে হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতে হবে। হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে। আদালতে প্রতি তারিখে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আপনার জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত।

জামিন সাধারণত পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই চাইতে হয়। তবে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করুন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন। চার্জশিট বা অভিযোগপত্র হয়ে গেলে আপনার মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হবে। অভিযোগ গঠনের দিন আপনাকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। তখন আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারবেন

আদালতে মামলা হলে করণীয় -

যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয়, তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। মামলা সাক্ষ্য পর্যায়ে গেলে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। যদিও মামলার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ যিনি মামলা করেন তাঁর ওপর বর্তায়। অনেক সময় মিথ্যা মামলা হলে মামলাকারী মামলা ঠুকে দেওয়ার পর আর হাজির হন না। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি তারিখ যাওয়ার পর মামলা থেকে খালাস পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

হাইকোর্ট বিভাগে জামিন-

ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন। মনে রাখতে হবে, সিআর মামলায় অভিযুক্ত সব আসামি হাজির হলেই বিচারের জন্য মামলাটি বদলি করা হয়। আপনি কোনো কারণে হাজির না হলে আপনার জামিন বাতিল হতে পারে। পর্যায়ক্রমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি হতে পারে। এতে হাজির না হলে আপনার মালামাল ক্রোকের আদেশ হতে পারে এবং আপনার অনুপস্থিতিতেই বিচার হতে পারে।

মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে করণীয়-

সাক্ষ্যপ্রমাণে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি প্রচলিত আইনেই মামলা দায়ের করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারবেন। আইনে মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত সাজার বিধান রয়েছে এবং আপনি চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

আমাদের সবার মনে রাখতে হবে আইনের চোখে আমরা সবাই সমান। এটাও মনে রাখতে হবে অপরাধী হলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে, আর নিরপরাধ হলে আপনি মুক্তি পাবেন।

লেখক: তানজিমুল ইসলাম এল.এল.বি (অনার্স), এল.এল. বি

জুড়ীরসময়/তানজিম/হোসাইন