জুড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিপন্ন প্রজাতির লজ্জাবতী বানরের মৃত্যু

জুড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বিপন্ন প্রজাতির লজ্জাবতী বানরের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিপন্ন প্রজাতির একটি লজ্জ্বাবতী বানরের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুক মিয়া বলেন, বুধবার সকাল আটটার দিকে বানরটি মৃত অবস্থায় বিদ্যুতের তাঁরে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তারপর দুপুর ১২ টার দিকে বানটি বিদ্যুতিক তাঁর থেকে নিচে মাটিতে পড়ে যায়। এর পর সন্ধা সাতটার দিকে স্থানীয় কয়েকজন মিলে বানরটি মাটিচাপা দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ সনে ডোমাবাড়ী এলাকায় জামাল মিয়ার বসতবাড়ির পাশে আরেকটি লজ্জাবতি বানর বিদ্যুতিক তাঁরে স্পৃষ্ট হয়ে মারাগেছে। পরে স্থানীয় লোকজন মৃত বানরটিকে মাটিচাপা দিয়েছে। বিগত বছরে আরো বেশ কয়েকটি চশমাপরা হনুমান ওই এলাকায় একইভাবে মারাগেছে। 

স্থানীয়রা আরও জানান, উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, দিলখুশা, কমলছড়া ও ডোমাবাড়ী এসব এলাকায় বনের ভেতর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের (পবিস) খোলা তার টানা হয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুতিক লাইন টানানো হলে বাধ্যতামূলক প্লাস্টিক কাভার মোড়ানো তাঁর লাগানোর কথা থাকলেও মানছে না পল্লীবিদ্যুৎ কতৃপক্ষ। বন্যপ্রাণী বিচরণকৃত এলাকা হওয়ায় এতে প্রায় সময় বানর, হনুমান, বাদুড় সহ বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঘটে। 

পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ করেন, ঐ এলাকায় ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী মারা গেছে। এ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে চিটির মাধ্যমে সংরক্ষিত বন এলাকায় ইনসুলেটেড (প্রলেপযুক্ত) তারের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করা হলে ২ কি: মি: লাইন কাভার করা হয়েছে। তবে, বনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ঝুকিপূর্ণ স্থানে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই লাঠিটিলা বন বনপ্রাণী শূণ্য হয়ে পড়বে।

লজ্জাবতী বানর গবেষণা ও সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সাবিত হাসান বলেন, যে সকল কারণে বাংলাদেশে লজ্জাবতী বানর আজ হুমকির মুখে তাদের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া অন্যতম। শুধু লজ্জাবতী বানরই নয় এভাবে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে মারা পড়ছে অন্যান্য বানর প্রজাতিরাও। ২০২৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত লাঠিটিলায় চার বা ততোধিক বানরের বিদ্যুৎ তায়িত হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে যা লজ্জাবতী বানরের অস্তিত্বের জন্য খুবই ভীতিজনক। বনের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের তার নেওয়ার ব্যাপারে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে উদাসীনতা করলে চলবে না। এছাড়াও বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা নেওয়ায় গাড়ি চাঁপা পড়ে মারা যাচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণী, চলছে লজ্জাবতী বানর সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী পাচার, উজাড় হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গার জীববৈচিত্র্য একদিন হারিয়ে যাবে, যা মানবজাতির অস্তিত্বকে সংকটে ফেলবে

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাজনগরের ডিজিএম গোলাম সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, বিভিন্ন সংরক্ষিত বনে খোলা তারের পরিবর্তে সেগুলোতে ইতিমধ্যে কভার তার (ইনসুলেইটেড) লাগানোর উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ এলাকায়ও কভার তারের জন্য  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সদর দপ্তর (মৌলভীবাজার) ড.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে আমরা পল্লিবিদ্যুতকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। বিদ্যুতের খোলা ক্যাবল গুলো কাভার করার কথা। কেন করেনি আমরা খুঁজ নিয়ে আবার পল্লী বিদ্যুতকে অবগত করবো। যেন দ্রুত তারগুলো কাভার করা হয় যাতে আর কোন বন্যপ্রাণীর মৃত্যু না হয়।

জুড়ীরসময়/খোর্শেদ/হোসাইন