আবিদ হোসাইন::
আজ ১ বছর পূর্ণ হলো আমার বাবা ইন্তেকাল করার। দুনিয়ার বুকে তিনি নেই। বাবাহীন প্রতিটা মুহুর্ত'ই যেন হৃদয় ভাঙা শব্দের কোলাহলে ভিতরটা কাপে। বাবা মানেই একটা সন্তানের মহা প্রাপ্তি, যা বাবা বেঁচে থাকতে সন্তানেরা অনুধাবন করতে পারে না।
যখন থেকে আমি নিজেকে বুঝতে শুরু করি তখন থেকেই অনুভব করি খোলা আকাশে আমার হাত ধরে ঘুড়ির সুতোর মতো ভাসিয়ে নেয়া আব্বার নির্ভর হাত। যে হাতের নাগাল থেকে কখনো ছিটকে যেতে দেননি আমায়। বুঝতে পারি জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত জড়িয়ে গিয়েছে আব্বার ভালোবাসা, মায়া, মমতা, আব্বা নামক বিশাল বটবৃক্ষের ছায়ায়। দিন দিন আমার বেড়ে উঠা যেন আব্বার আনন্দের অন্যতম কারণ। আব্বা মানে কি তা বুঝে উঠার গল্পের লেখক হতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল আমার মনুষ্যত্ব। আমিও জড়িয়ে যাই আব্বার মায়াবী শাসন, রাগ অভিমান, আর অভিযোগে।
২০১৮ সালে আব্বা প্রথম ব্রেইন স্টোক করেন। এরপর থেকে শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো থাকতো না। হাঁটাচলা কেবলমাত্র বাড়ি আর মসজিদ পর্যন্ত-ই সীমাবদ্ধ ছিল। বয়স বাড়ার সাথে যেন দিন দিন আব্বা নিস্তেজ হচ্ছিলেন। ৪ ভাই ২ বোন আর মা-বাবার এই পরিবারে আমি সবার ছোট। আমার জন্ম আজ থেকে ২০ বছর ৪ মাস ১৯ দিন আগে। আমার ছোট্ট এ জীবনে আব্বার মতো যোদ্ধা আমি দ্বিতীয়জন দেখিনি। দেখিনি আব্বাকে ক্লান্ত হতে। পরিবারের জন্য নিজের সবটুকু নিয়ে এ যুদ্ধে নেমেছিলেন। এ যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিলেনও বটে। তবে সুখের সান্নিধ্যে থাকা হলো না বেশিদিন। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন ২০২৩ সালের মার্চের ৫ তারিখ বিকাল ৫ টায়। যে দিনটিতে আমাদের পরিবার থেকে আল্লাহ একটি আলোর প্রদীপ উঠিয়ে নিয়েছিলেন, যে আলো আজও খুঁজি প্রতিটা প্রান্তরে। আব্বা মৃত্যুবরণের পরদিন ৬ই মার্চ সকাল ১০ টায় পঞ্চায়েতের মোকাম মসজিদে জানাযা ও কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
❝ এখন আব্বার অভিযোগ গুলোও শুনতে ইচ্ছে করে, আব্বার দেয়া আদেশ উপদেশ গুলো যেন আজ শব্দহীন বার্তায় আমার চারিপাশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আব্বা ইন্তেকালের আজ এক বছর, জীবিতাবস্থায় কখনো ভাবিনি আব্বার শূন্যতা আমাকে এতোটা কঠিন অন্ধকার রূপে বদলাবে। কল্পনায় ছিলো না আব্বাকে হারানোর পর পাথর নিমিষেই মোমের মতই গলিয়ে যাবে। পৃথিবীর প্রতিটি বাবা-ই শ্রেষ্ঠ, যারা সন্তানের ভাবনায় কাটিয়ে দেয় সারাটা জীবন ❞।
আজ আব্বা নেই স্মৃতিগুলো বার-বার চোখে পড়ে। পাঞ্জাবি গুলো আজ আলমারিতে তালাবদ্ধ। জায়নামাজ টা সেই আগের জায়গায়'ই রাখা থাকে, শুধু আগের মানুষ এটা ব্যবহার করেন না। আব্বা যে লাঠির সহায়তায় হাঁটতেন, তা আজও দরজার কোণায় অক্ষত পড়ে আছে। হয়না ব্যবহার। আল্লাহ যেন আব্বা সহ পৃথিবীর সকল বাবা এবং মরহুম - মরহুমাদের কবরের জীবনকে সুখময় করে জান্নাতবাসী করেন। আমিন।
লেখক: ডেস্ক ইনচার্জ, জুড়ীর সময়
জুড়ীরসময়/ডেস্ক/জামান