নারীর দ্বারা পুরুষ উত্ত্যক্তের শিকার হলে আইনি প্রতিকার

নারীর দ্বারা পুরুষ উত্ত্যক্তের শিকার হলে আইনি প্রতিকার


তানজিমুল ইসলাম::
প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি, পথেঘাটে, স্কুল উত্ত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা কোন নারী নিগ্রহের শিকার হলে দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিকার রয়েছে। নারী উত্ত্যক্তকরণ যার ইংরেজি পরিভাষা ইভটিজিং।

ইভটিজিংয়ের জন্য অনেক বখাটের সাজা হওয়ার নজিরও দেশে বিদ্যমান আছে।
কিন্তু কোন নারী প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কাজ করে বা নারীর দ্বারা এডামটিজিং/পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হন সেক্ষেত্রে আইনগত প্রতিকার আছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ আবগত নয়।

এই আলোচনায় সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করব। আসুন দেখে নেওয়া যাক নারী প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কাজ করে বা নারীর দ্বারা এডামটিজিং/পুরুষ মানসিক নির্যাতনের শিকার হলে কোন আইনে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। 

যে নারী শরীর দেখায় যৌন আবেদন মেখে তাকে যৌনমোড়কীকরণ বলে। যৌনমোড়কীকরণ হল পুরুষের স্বাস্থ্য বিনষ্ট করা ও পুরুষকে ধর্ষণ ফাঁদে টেনে আনা। এটা (sexualization) পুরুষ অধিকারকে মহিলারা নস্যাৎ করছে।

পুরুষের অধিকার সুস্থ থাকা, যৌন সংগম করা এটা পুরুষের মানবাধিকার। একে সুরক্ষিত করুন যদি কোন নারী প্রকাশ্য স্থানে কোন অশ্লীল কাজ করে বা কোন নারীর দ্বারা কোন পুরুষ এডামটিজিং/যৌনমোড়কীকরণের শিকার হন এবং যার ফলে গণ উপদ্রপ সৃষ্টি হয়। তবে ভুক্তভোগী পুরুষ চাইলে নিম্নে বর্ণিত আইনের বিধান অনুযায়ী নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন।

অতীতের অনেক সময় থেকে বর্তমানে আমাদের দেশের নারী সর্বক্ষেত্রে পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য-
বাংলাদেশের পুরুষদের একটা বিরাট অংশ বহুদিন ধরে পুরুষ নির্যাতনের জন্য আলাদা আইন প্রণয়নের দাবি উত্থাপন করছে। তাদের দাবি নারী নির্যাতনের জন্য আলাদা আইন থাকলেও বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের কোন  আলাদা আইন নেই। তারা আরও বলে যে বাংলাদেশে পুরুষদের একটি বিশাল অংশ নারী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য চারটি আইনের উল্লেখ করা প্রয়োজন-
১। দণ্ডবিধি, ১৮৬০
২ । নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০
৩। যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮
৪। পারিবারিক সহিংসতা নিরোধ আইন, ২০১০

দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অনুসারে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হলে পুরুষ কিংবা স্ত্রী যেই হোক এই আইনের মাধ্যমে মামলা করতে পারবে। এই আইনের 323 ধারা, 324 ধারা, 325 ধারা 326 ধারা অনুসারে শারীরিকভাবে নির্যাতিত পুরুষ কিংবা স্ত্রী মামলা করতে পারবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুসারে কেবল নারী ও শিশু যৌতুকের জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হলে মামলা করতে পারবে। পুরুষ এ আইন অনুসারে কোন মামলা করতে পারেনা । নারীদের জন্য দণ্ডবিধিতে প্রতিকার থাকা সত্ত্বেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করার সুযোগ আছে শুধু মাত্র যৌতুকের জন্য নির্যাতনকে প্রতিরোধ করার জন্য। বাংলাদেশ যৌতুকের জন্য নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ কিন্তু যৌতুকের জন্য পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা খুবই বিরল। আর যদি নির্যাতনের শিকার হয়ও তবে দণ্ডবিধি অনুসারে প্রতিকার পেতে কোন বাধা নেই।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুসারে স্ত্রী এবং পুরুষ উভয়েই মামলা করার অধিকার রাখে।এই আইন অনুসারে বিবাহ বলবৎ রাখার শর্তে বিবাহের যে কোন পক্ষ যদি যৌতুক দাবি করে তাহলে যে কোনো পক্ষই মামলা করার অধিকার রাখে সুতরাং এই আইন অনুসারে নারীরা যেমন মামলা করতে পারবে ঠিক পুরুষও তেমন মামলা করতে পারবে সুতরাং এই আইনের ভিতরে নারী-পুরুষ কোন বৈষম্য নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিচারক, আইনজীবী এবং সাধারণ মানুষ মনে করে যে, এই আইন অনুসারে কেবল নারীরাই মামলা করতে পারবে।

পারিবারিক সহিংসতা আইন, ২০১০ অনুসারে কেবলমাত্র নারী এবং শিশুরাই মামলা করতে পারে। সত্যিকার অর্থে এই আইনের অধীনে মামলা করলে আসামির কোন সাজা হয় না বরং আদালত আসামিকে সহিংসতা বন্ধ করার জন্য একটি আদেশ প্রদান করে। এই আদেশ ভঙ্গ করলেই কেবল তাকে শাস্তি দেওয়া যায় সুতরাং এই আইনটা অনেক দুর্বল আইন। এই আইনে মামলা হয় না বললেই চলে। মূলত বিবাহ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কিভাবে পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা যায় এ কথা চিন্তা করেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।

যদিও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬০% পুরুষ কোন নারীর এরকম কর্মকান্ডে কিভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে তা জানেই না।

লেখক: এল.এল.বি (অনার্স), এল.এল. এম

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/মাসুদ/জামান