তুইতো বেহেশতের ফুল, জান্নাতে চলে গেছিস

তুইতো বেহেশতের ফুল, জান্নাতে চলে গেছিস


আশরাফ আলী::
আবরার আলভী। আমার ২য় বোনের একমাত্র সন্তান। আবরারের জন্ম ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল। আলভীর জন্মের সময় তার মা-কে নিয়ে হাসপাতালে আসতে হয়। সিজারে তার জন্ম হয়। মূলত ডা. রামেন্দ্র সিংহ দাদার পরামর্শে জুড়ীর আব্দুল আজিজ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার জন্মের পর পরই রামেন্দ্র দাদা আমাকে ছবি দেন আলভীর। আলভীর সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হাসপাতালে। এরপর সে বেশ কয়েকদিন অসুস্থ ছিল। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়।

বড় বোনের দুই ছেলে আর ছোট বোনের এক ছেলে আমার কাছে ছিল হিরের টুকরোর মতো। তারা অসুস্থ হলে খোঁজ খবর নেওয়া, হাসপাতালে নেওয়া, ডাক্তারের কাছে নেওয়া এগুলো ছিল আমি বাড়ি থাকলে রুটিনের মতো। ভাগনারা আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসলে আমার বাড়ি আসা মিস হয়না। তাদের কোলে নিয়ে ঘুরা, তাদের ঘুম পাতানো এগুলো ছিল আমার কাছে রুটিন ওয়ার্ক। আর বোনেরা আমার কাছে তাদের সন্তান দিয়ে শান্তি পেত।

আলভী ফোনে তার বাবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো। আমিও মাঝে মধ্যে ভিডিও কলে তাকে দেখতাম। সে মোবাইল হাতে নেবার চেষ্টা করতো। তার বসয় ৯ মাস কিন্তু তাকে দেখলে বুঝা যেত বয়স হবে দেড় থেকে দুই বছর।

গত কয়েকদিন থেকে ভাগনা অসুস্থ। তাকে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে। গত শুক্রবার ১২ জানুয়ারি আলভীকে তার মা, চাচা ও নানী জুড়ীর একটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন ডাক্তার দেখাতে। তার আগে আলভীর মা আমাকে ফোন দিয়ে বলে তাকে ডাক্তার দেখাতে এসেছে। আমি ঘুম থেকে উঠে আলভীকে দেখতে যাই। আমি যখন হাসপাতালে যাই তখনও আলভীকে ডাক্তার দেখেননি। আমি আমার ভাগনার কাছে যাবার সাথে সাথেই সে তার মায়ের কোল থেকে আমার কোলে চলে আসে। আমি তাকে কোলে নিয়ে ঘুরি। তারপর যখন ডাক্তারের চেম্বারে যাই তখন ডাক্তার তাকে দেখে বলেন তার লান্সে সমস্যা আছে তবে নিয়মিত চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাবে।

এরপর নিয়মিত চলে ভাগনার খোঁজ নেওয়া। আজ সকালে বোন কল দেয় আমাকে। আমি বোনের সাথে কিছু সময় কথা বলে আলভীর বড় চাচাকে কল দেই। তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলি। ডাক্তার বললেন নেবুলাইজার আরও বাড়ানোর জন্য। একথা বলে দেই আলভীর চাচাকে। কিন্তু নিয়তি আর সহায় ছিলোনা। আলভী চলে যাবে আল্লাহর জিম্মায়। এটাই ছিল তার ভাগ্যে। তাই হলো। নেবুলাইজার আর দেওয়া গেল না। সে চলে গেল না ফেরার দেশে। যেখানে গেলে কেউ ফিরে আসে না। সেই না ফেরাটা অনন্ত কালের। আমাদের আলভী সেই জায়গায় চলে গেল আল্লাহর জিম্মায়।

আমার মামাটাকে আর কোলে নেওয়া হবেনা। আদর করা হবেনা। চঞ্চল মামাটাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে চলে গেছে আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে। আল্লাহ তুমি আমার আলভী মামাটাকে আদরে রেখো। মামা তোর জন্য আমরা কিছু করতে পারিনি। তবে তুই তোর মা-বাবার জন্য পরকালে নাজাতের ওসিলা হবি। তুইতো বেহেশতের ফুল। জান্নাতে চলে গেছিস আমাদের একা ফেলে।

রাতে যখন বোনের কাছে যাই বোনের সেই কান্না আমাকে কাঁদিয়েছে। মামা তোর জন্য বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে। তোর মায়ের কান্না সহ্য হয়না। নিজেকে মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে কাঁদি। চোখের জল অবিরত পড়েছে তোর কবরের পাশে যখন দাঁড়াই। তোর প্রতিটি স্মৃতি এখনও চোখে ভাসে। আল্লাহ আমার প্রিয় মামাটাকে হেফাজতে রেখো। জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান কর। আমার কলিজার টুকরো বোনকে এবং তার স্বামীকে এই সুখ সইবার তৌফিক দান কর। আমিন।

লেখক: সম্পাদক, জুড়ীরসময়।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/জামান