জুড়ীর কালনীছড়া খাল পরিদর্শন করলেন পাউবো কর্মকর্তা



নিজস্ব প্রতিবেদক ::

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের কালনীছড়া খাল এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), মৌলভীবাজার-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন।

বুধবার (৪ অক্টোবর)  দুপুরে তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় বাসিন্দারা তার নিকট খালের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে দ্রুত খালটি খননের জোর দাবী জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষক মন্তর মিয়া, আতিকুর রহমান, সালমান কবির, ফজলু মিয়া, আমির হোসেন, মজনু মিয়া, জয়নাল আবদীন, আলিম উদ্দিন, বদই মিয়া, সুরমান মিয়া, মবশ্বির আলী, হান্নান মিয়া প্রমুখ বলেন- অতিপুরনো এ খালটি ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে আমন ধান তলিয়ে যায়, আবার বোরো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। তাই প্রায় হাজার একর জমি বছরের পর বছর পতিত পড়ে থাকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), মৌলভীবাজার-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন- স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী এ খালটি প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ভরাট ও দখল হওয়ার  ফলে খালটি তার আকার অনেকাংশে হারিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় এলাকাটি পরিদর্শন করলাম। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিস্তারিত অবগত হলাম। এস.এ ও আর.এস নকশায় (ম্যাপ) খালের অস্তিত্ব রয়েছে। আমরা খালটি খননের প্রস্তাব উচ্চ পর্যায়ে পাঠাবো

উল্লেখ্য, স্থানীয় কাপনাপাহাড় চা বাগানের নিকট চম্পকলতা গ্রামের সীমান্ত টিলা থেকে কালনীছড়ার উৎপত্তি। অপরদিকে মোহাম্মদনগরের টিলা এলাকা থেকে কটাই দেওয়ানের নালা শুরু হয়। দুই দিক থেকে নেমে আসা ছড়া দু’টি কালনীজালাই হাওরের মধ্যবর্তী কাড়ারঘাট নামক স্থানে গিয়ে এক জায়গায় মিলিত হয়। সেখান থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে হযরত শাহ খাকী (রঃ) মাজার ঘাটে পাবিজুড়ী খালের সাথে সংযুক্ত হয়ে হাকালুকি হাওরে ধাবিত হয়েছে। এ খালের পানিতে মোহাম্মদনগর, চম্পকলতা, চাটেরা ও শাহাপুর মৌজার হাজার একর জমিতে বোরো ও আমন ধান এবং রবিশস্য চাষ হতো। সেই সাথে চম্পকলতা, কালীনগর, ভোগতেরা, চাটেরা, জায়ফরনগর ইত্যাদি এলাকার লোকজন মাছ ধরতেন। এক সময় এ খালে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। 

কিন্তু বর্তমানে সেই খাল আগের মত আর নেই। সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রচন্ড বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিমাটি ও নুরি পাথরে কৃষিনির্ভর খালের বেশ কিছু অংশ ভরাট হয়ে গেছে। বাকীটুকু পার্শ্ববর্তী জমির মালিকগণ ভরাট করে দখলে নিয়েছেন। যে কারণে একদিকে এক সময়ের ৩০/৪০ ফুট প্রস্থের বড় খালটি এখন ছোট নালায় পরিণত হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে। এখন খালে মাছ থাকা তো দুরের কথা, পানিও থাকেনা। অপরদিকে এ হাওরের প্রায় হাজার একর জমি ১৪/১৫ বছর থেকে অনাবাদি পড়ে আছে। ধান চাষের বদলে এ হাওরে এখন শুধু গোবাদি পশু চরানো হয়। অনেক সময় গরু গুলোও খালে খাবার পানি পায় না। পানির  অভাবে বোরো খেত হয় না। আবার সামান্য বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। তলিয়ে যায় আমন ধান। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় অনেক বাড়ী জলমগ্ন থাকে। বোরো ও আমন ধান, রবিশস্য এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদনে এ খালের বিকল্প নেই। শত শত কৃষক পরিবারে শান্তি ও স্বচ্ছলতা ফেরাতে এ খালটি পুনঃখনন একান্ত অপরিহার্য।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এএ