রাজনৈতিক মামলা কবে বন্ধ হবে?

রাজনৈতিক মামলা কবে বন্ধ হবে ?


মিডিয়ার কল্যাণে আমরা কয়েকদিন আগে জুড়ী উপজেলার একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম। সেখানে একটি দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। মামলায় আসামী করা হয় মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের। এই মামলার পর দেশব্যাপী বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। তারপর থেকে জনমনে প্রশ্ন- কবে বন্ধ হবে রাজনৈতিক মামলা?

রাজনৈতিক মামলাগুলো বেশিরভাগ হয়ে থাকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। যাতে প্রতিপক্ষ তাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে না পারে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে তর্ক রয়েছে বিশিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে।

এখন প্রশ্ন হলো? পুলিশ কি ইচ্ছে করলেই মামলা করতে পারে? আর মামলা যদি করে সেখানে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নাম আসে কিভাবে? রাজনীতির সাথে জড়িত নন এমন ব্যক্তির নাম মামলায় আসে এবং গ্রেফতার হন কিভাবে? এরকম অবস্থা হলে সাধারণ মানুষ যে নির্যাতিত হবে না তার গ্যারান্টি কি? এই ঘটনায় মানুষের পুলিশের প্রতি কোন ধরণের আস্থা তৈরি হবে? প্রশ্নগুলো থেকেই যায়।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) জুড়ীতে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে মিছিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলো। মিছিলের পর পুলিশ ২৮ জনের নামোল্লেখসহ আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর মামলা করে।

গণমাধ্যম সূত্রে আরও জানা যায়, পুলিশ এজাহারে উল্লেখ করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কর্মীরা জনসাধারণের যান চলাচল বন্ধ ও নাশকতামূলক কর্মকান্ড করার জন্য উত্তেজিত হইয়া মিছিল রাস্তায় বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অমান্য করে তারা মিছিল দিতে শুরু করে। পরে নেতাকর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় শুক্রবার (০৬ অক্টোবর) পুলিশ বাদি হয়ে জুড়ী থানায় একটি মামলা (মামলা নং-০৬) করে।

গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী  প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, মামলার এজাহারের ১১ নং আসামী লোকমান হোসেন মারা যান ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট। তিনি উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের হাজী রুমুজ আলীর ছেলে। এমামলায় ৬ নং আসামী করা হয় জায়েদ আহমদকে। তিনি ৫ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। জায়েদ আহমদ উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত ফয়জুল্লাহর ছেলে। ফুলতলা ইউনিয়নের রজব উদ্দীনের ছেলে বুরহান উদ্দীন দুই বছর থেকে আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। মামলায় বুরহানকে ২৩ নং আসামী করা হয়েছে। ফুলতলা বাজারের ইব্রাহীম আলীর ছেলে নাঈম উদ্দীন ২ বছর আগে ফ্রান্সে পাড়ি জমান।  তাকেও পুলিশের করা এই মামলায় ২৪ নং আসামী করা হয়েছে।

দৈনিক সমকাল পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মামলার ২ নাম্বার আসামী যাকে করা হয়েছে তিনি রাজনীতির সাথে কোনভাবে জড়িত নন। এলাকার কিছু ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। দৈনিক আজকের পত্রিকা বুধবার এই ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঘটনাটি নিয়ে। প্রতিবেদনে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। সেই নিউজে মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেছেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। এজাহার হচ্ছে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে সংশোধন করা হবে। এটি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে পুলিশের দোষ প্রমাণিত হলে সেটিও দেখা হবে।

এখন প্রশ্ন হলো? পুলিশ কি ইচ্ছে করলেই মামলা করতে পারে? আর মামলা যদি করে সেখানে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নাম আসে কিভাবে? রাজনীতির সাথে জড়িত নন এমন ব্যক্তির নাম মামলায় আসে এবং গ্রেফতার হন কিভাবে? এরকম অবস্থা হলে সাধারণ মানুষ যে নির্যাতিত হবে না তার গ্যারান্টি কি? এই ঘটনায় মানুষের পুলিশের প্রতি কোন ধরণের আস্থা তৈরি হবে? প্রশ্নগুলো থেকেই যায়।

জুড়ীরসময়/সম্পাদকীয়/জামান